Dr. Bashir Mahmud Ellias's Blog

Know Thyself

Dark side of Medical science

Leave a comment

চিকিৎসা বিজ্ঞানের অন্ধকার দিক

ইংরেজীতে একটি কথা প্রচলিত আছে যে, আমার ডাক্তার সবই জানেন (My doctor knows all)। এই প্রবাদ বাক্যটির মানে কি ? সহজ কথায় ইহার অর্থ হলো ডাক্তারদের সম্পর্কে সাধারণ মানুষের উচ্চ ধারণা। লোকেরা মনে করে প্রথমত ডাক্তাররা খুবই জ্ঞানী-গুণী মানুষ এবং দ্বিতীয়ত এই কারণে জেনেশুনে ডাক্তাররা কখনও রোগীদের ক্ষতি করতে পারে না। মানুষের নিকট সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ হলো তার জীবন আর ডাক্তাররা যেহেতু জীবন বাঁচাতে সাহায্য করে, সেহেতু ডাক্তারদের সম্পর্কে মানুষের সুধারণা অথবা উচ্চ ধারণা থাকাটাই স্বাভাবিক। কিন’ দুঃখের বিষয় এবং অতীব পরিতাপের বিষয় এই যে, অধিকাংশ ডাক্তারই তাদের প্রতি পোষণ করা সাধারণ মানুষের উচ্চ ধারণাকে মর্যাদা দেন না। কিন’ ইহার কারণ কি ? প্রথমত আমাদেরকে মনে রাখতে হবে যে, ডাক্তাররাও আমাদের মতো মানুষ; তারা ফেরেশতা নন। অন্য সবার মতো তাদের মনেও লোভ-লালসা-হিংসা-ঘৃণা প্রভৃতি দোষ পুরো মাত্রায়ই আছে। একজন ডাক্তার যখন রাস-ায় লেটেস্ট মডেলের একটি গাড়ি দেখেন কিংবা নিজের মহল্লায় রাজপ্রাসাদের মতো সুন্দর একটি বাড়ি দেখেন; তখন তার মনেও এমন একটি বাড়ি এবং গাড়ির মালিক হওয়ার স্বপ্ন জাগতে পারে। আর গাড়ি-বাড়ির মালিক হওয়ার জন্য অন্যদের মতো তিনিও তার নীতি-আদর্শকে গলা টিপে হত্যা করতে পারেন। ফলে তিনি অল্প সময়ে যাচ্ছেতাইভাবে অধিক রোগী দেখে বেশী টাকা উপার্জন করতে পারেন, অপ্রয়োজনীয় বস্তা বস্তা টেস্ট লিখে দিয়ে ডায়াগনষ্টিক কোম্পানীর কাছ থেকে হাজার হাজার টাকা কমিশন খেতে পারেন, ঔষধ কোম্পানীর কাছ থেকে ঘুষ খেতে পারেন, সরকারী দ্বায়িত্ব ফাঁকি দিয়ে প্রাইভেট প্র্যাকটিস করতে পারেন, সরকারী হাসপাতালের রোগীকে প্রাইভেট ক্লিনিকে টেনে নিতে পারেন, সরকারী হাসপাতালের ঔষধ ও যন্ত্রপাতি বিক্রি করে দিতে পারেন ইত্যাদি ইত্যাদি। আমরা অনেকে ভুলে যাই যে, পুঁজিপতি বা শিল্পপতিদের ছেলে-মেয়েরা কখনও ডাক্তার হয় না যে, তাদের টাকার প্রয়োজন নাই। বরং মধ্যবিত্ত এবং নিম্নবিত্ত পরিবারের ছেলে-মেয়েরাই প্রধানত ডাক্তারী পেশায় আসে। কাজেই ডাক্তারদের টাকার চাহিদা সবচেয়ে বেশী থাকাই যুক্তিসঙ্গত। কেউ কেউ হয়ত বলতে পারেন যে, পুঁজিপতি বা শিল্পপতিদের টাকার চাহিদা বরং মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তদের চাইতে আরো অনেক বেশী থাকে ; আমিও তা স্বীকার করি। অনেক ডাক্তার আফসোস করেন যে, অশিক্ষিত মেধাহীন লোকেরা কিভাবে কিভাবে ধানাইপানাই করে রাতারাতি শিল্পপতি-মন্ত্রী-এম.পি. হয়ে যাচ্ছে ; অথচ শিক্ষাজীবনের সবগুলো পরীক্ষাতে স্টার মার্ক পেয়েও এখন পযর্ন্ত একটি ভালো বাড়িও বানাতে পারলাম না।

পেশাগত অজ্ঞতার কারণেও ডাক্তাররা আপনার ক্ষতি করে ফেলতে পারেন। কেননা যে-সব ডাক্তার একই সাথে এলোপ্যাথি এবং হোমিওপ্যাথি সম্পর্কে বিশেষজ্ঞ, তারা স্বীকার করেন যে একজন পরিপূর্ণ চিকিৎসক হওয়ার জন্য দুটি বিষয়েই গভীর পড়াশোনা থাকা দরকার। সুতরাং যেই এলোপ্যাথিক ডাক্তার হোমিওপ্যাথি সম্পর্কে পড়াশোনা করেননি, চিকিৎসা বিজ্ঞানে তিনি অর্ধশিক্ষিতই রয়ে গেছেন। আবার যে হোমিও ডাক্তারের এলোপ্যাথিক চিকিৎসা বিষয়ে পড়াশুনা নাই, তার চিকিৎসাজ্ঞান অপূর্ণই থেকে গেলো। এই হিসাবে বলা যায়, আমরা সমাজে যাদেরকে ডাক্তার হিসেবে জানি তাদের মধ্যে শতকরা ৯৯ জনই হাতুড়ে ডাক্তার। হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা বিজ্ঞান হলো এলোপ্যাথির চাইতে একধাপ উপরে এবং মেডিসিনের সর্বোচ্চ শাখা। এজন্য উন্নত বিশ্বের অনেক দেশেই আইন পাশ করা হয়েছে যে, এলোপ্যাথিতে সরকারী ডিগ্রিপ্রাপ্ত চিকিৎসক ছাড়া কেউ হোমিওপ্যাথি অধ্যয়ন এবং প্র্যাকটিস করতে পারবে না। আবার অনেকে মনে করেন, হোমিওপ্যাথিকে ধ্বংস করাই এই ধরণের আইন প্রণয়ণের মূল লক্ষ্য। সাধারণভাবে দেখা যায় যে, নতুন রোগ (acute disease) বা ইমারজেন্সী অসুখ-বিসুখ এলোপ্যাথিক চিকিৎসায় সহজে আরোগ্য হয় আবার পুরনো রোগ (chronic disease) বা জটিল রোগ হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় সহজে সারানো যায়। অথচ বাস-বে এলোপ্যাথিক ডাক্তাররা দ্রুত, সহজে এবং কম খরচে রোগ নিরাময়ের স্বার্থে কখনও ক্রনিক রোগে আক্রান- রোগীকে হোমিওপ্যাথিক ডাক্তারের কাছে রেফার করেন না আবার হোমিও ডাক্তাররাও ইমারজেন্সী রোগীকে সংকটাপন্ন অবস’ায় অনেক চেষ্টা করেও লক্ষণ ধরতে না পারা সত্ত্বেও এলোপ্যাথিক ডাক্তারের নিকট রেফার করেন না। বরং উভয়েরই চেষ্টা থাকে, রোগীর ক্ষতি করে হলেও তাকে আটকে রাখবে এবং অস্ট্রেলিয়ান গাভির মতো তাকে দোহন করতে থাকবে। আবার কিছু কিছু রোগ আছে যেগুলোকে এলোপ্যাথিক চিকিৎসায় নিরাময় করা কল্পনারও বাইরে অথচ হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় সহজেই নিরাময় করা যায়। অথচ না জানার কারণে এলোপ্যাথিক ডাক্তাররা রোগীকে বিভ্রান্ত করে থাকে; বলে যে এই রোগের কোন চিকিৎসা নাই। প্রতিটি ঔষধই আমাদের কম-বেশী ক্ষতি করে থাকে। অন্তত কিডনীর তো ক্ষতি করবেই, কেননা সব ঔষধকেই শরীর থেকে বের করে দেওয়ার কঠিন কাজটি করতে হয় কিডনী দুটিকে। আখেরী জমানায় লোকেরা বস্তা বস্তা ঔষধ খেয়ে কিডনী বারোটা বাজাবে ভেবেই হয়ত আল্লাহ্‌ তাআলা মানুষকে দুটি করে কিডনী দিয়ে দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন যাতে একটি নষ্ট হলেও অন্যটি দিয়ে আরো কিছুদিন বাচঁতে পারে।

হোমিওপ্যাথির মূলনীতি হলো (এবং বর্তমানে একটি প্রতিষ্টিত বৈজ্ঞানিক সত্য হলো), যে পদার্থ রোগ সারাতে পারে সেই একই পদার্থ রোগ সৃষ্টিও করতে পারে। মনে করুন আপনি একটি ঔষধ খেলেন যার দশটি রোগ সারানোর ক্ষমতা আছে অথচ আপনি সেটি খেলেন মাত্র একটি রোগ সারানোর জন্য। সেক্ষেত্রে ঔষধটি যে রোগটি আপনার শরীরে আছে তাকে সারাবে এবং যে নয়টি রোগ আপনার শরীরে নাই সেগুলোর বীজ আপনার দেহ-মনে বপন করে যাবে। নয়টি না হোক, অন্তত দুয়েকটি রোগের বীজ হলেও সে বপন করে যাবেই। ফলে দুয়েক মাস কিংবা দুয়েক বছর পর যখন সেই রোগসমূহ ধীরে ধীরে বাড়তে বাড়তে স্বমহিমায় আত্মপ্রকাশ করবে, তখন হয়ত বিষয়টি আপনার চিন্তায়ও আসবে না যে, এই রোগগুলো আপনার খাওয়া অতীতের ঔষধগুলির দ্বারাই সৃষ্ট। সে যাক, রোগ হলেই যে চিকিৎসা করতে হবে, এমন কোন বাধ্যবাধকতা নাই। দেখতে হবে রোগের ফলে যে ক্ষতি হচ্ছে ; রোগের চিকিৎসায় তার চাইতে বেশী ক্ষতি হয় কিনা। যেমন অনেক চিকিৎসক দাদ, ছুলি ইত্যাদি মামুলি রোগের চিকিৎসায় এমন ঔষধ আপনাকে খেতে দিবেন যা আপনার লিভারের ক্ষতি করে থাকে। এখন বলুন দাদ, ছুলি, একজিমা ইত্যাদি ছোটখাটো চর্মরোগ নিয়ে বেঁচে থাকা ভালো নাকি এগুলোকে সারাতে গিয়ে কড়া কড়া ঔষধ খেয়ে লিভার, কিডনী ইত্যাদি নষ্ট করে অকালে মৃত্যুবরণ করা ভালো ? অনেক ডাক্তারই (রোগীকে খুশি করার জন্য !) অবলীলায় এই জাতীয় অপকর্ম করে থাকেন। অথচ রোগীকে একটু বুঝিয়ে বললে কতই না ভালো হতো যে, সাধারণ ঔষধে যখন এগুলো সারছে না তখন ক্ষতিকর ঔষধ খেয়ে এগুলো সারানোর চেষ্টা করা উচিত হবে না ; অথবা আপনি হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা অবলম্বন করে চেষ্টা করুন।

সাধারণ মানুষ না জানলেও ডাক্তাররা ঠিকই জানেন যে, শতকরা ৯০ ভাগ রোগ বিনা ঔষধেই সেরে যায়। একটু ধৈরয ধরলেই হলো এবং কিছু নিয়ম-কানুন মেনে চলার বিষয় আছে। এজন্য সবারই উচিত, ঔষধ না খেয়েই কিভাবে রোগমুক্ত হওয়া সম্ভব তার পন্থা ডাক্তারদের কাছ থেকে জেনে নেওয়া। আমাদের পূর্বপুরুষরা যে কয়েকশ বছর আয়ু পেতেন তার মূল রহস্য ছিল, তারা ঔষধ খেতেন না অথবা বলা যায় ঔষধ খুবই খু-ব-ই কম খেতেন। আমরা অনেকেই জানি না যে, ভিটামিন বা মাল্টিভিটামিন নামে যে-সব ঔষধ আমরা খাই, ইহারা পযর্ন্ত কখনও কখনও শরীরের মারাত্মক ক্ষতি করে থাকে। বাস্তবে দেখবেন, যে যত বেশী ঔষধ খায় ; তার রোগ-ব্যাধির সংখ্যা তত বাড়তে থাকে। তার স্বাস’্য তত তাড়াতাড়ি ভেঙ্গে পড়ে। অনেক সময় দেখা যায় যে, ডাক্তার বলছেন ঔষধ খাওয়া লাগবে না কিন’ রোগী জোর করে ডাক্তারকে দিয়ে ঔষধ লিখিয়ে নিচ্ছে। মানুষকে দোষ দিয়ে লাভ নেই ; ঔষধ কোম্পানীগুলো এতো সুন্দর সুন্দর রঙ-চং আর ডিজাইন করে ঔষধ বাজারে ছাড়ে যে, সেগুলো দেখলেই (শিশুদের চকলেটের মতো) যে কারো খেতে ইচ্ছে করবে। নিয়তির পরিহাস বলতে হবে (কেননা মনীষীরা বলে গেছেন) যে, “যা কিছু মানুষকে আকর্ষণ করে তার সবই মানুষের জন্য ক্ষতিকর আর যা কিছু মানুষের নিকট অপছন্দনীয় মনে হয় তার সবই মানুষের জন্য কল্যাণকর”। দার্শনিক ওলিভার ওয়েন্ডেল হোমস একবার বলেছিলেন যে, “পৃথিবীর সমস্ত ঔষধ যদি সমুদ্রে নিক্ষেপ করা হতো তবে মানবজাতির বিরাট উপকার হতো কিন্তু মৎসজাতির সর্বনাশ হয়ে যেতো”।

ডাক্তাররা হরহামেশা আপনাকে বলবেন যে, এই রোগের টিকা (vaccine) নেন, ঐ রোগের টিকা নেন। কিন্তু কখনও বলবে না যে, টিকা নেওয়ার কারণে আপনার তাৎক্ষণিক মৃত্যু হতে পারে, টিউমার হতে পারে, ক্যান্সার হতে পারে, ইমিউন সিস্টেমের বারোটা বেজে যেতে পারে, ব্রেন ড্যামেজ হয়ে যেতে পারে, হাঁপানি হতে পারে, ডায়াবেটিস হতে পারে, এনসেফালোপ্যাথি হতে পারে, গুলেন-বেরি সিনড্রোম হতে পারে, প্যারালাইসিস হতে পারে, মৃগীরোগ হতে পারে, অন্ধ হয়ে যেতে পারেন ইত্যাদি ইত্যাদি। পোলিও টিকাতে একবার ব্রেন টিউমার সৃষ্টিকারী এসভি-৪০ ভাইরাস পাওয়ার ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রে বিরাট আলোড়নের সৃষ্টি হয়েছিল ; কেননা উক্ত ব্যাচের পোলিও টিকা আগের বছর যুক্তরাষ্ট্রের পাঁচ কোটি শিশুকে খাওয়ানো হয়েছিল। ইতালীয় বিজ্ঞানীরা গবেষণায় দেখেছেন যে, এসভি-৪০ ভাইরাস যার শরীরে ঢুকে কেবল তার শরীরেই নয়, এমনকি তার ছেলে-মেয়ে এবং নাতি-পুতিদের শরীরেও ক্যান্সার সৃষ্টি করার ক্ষমতা রাখে। এখন বলুন, মাত্র পঞ্চাশ পয়সার হোমিও ঔষধে যে পোলিওমায়েলাইটিস রোগ সারানো যায়, তার হাত থেকে বাঁচার জন্য পোলিও টিকা নিয়ে ক্যান্সারে আক্রান- হওয়া কতটা বুদ্ধিমানের কাজ হবে ? অর্থ পিচাশ রক্ত পিপাসু নরঘাতক বড় বড় ঔষধ কোম্পানীগুলি টাকার লোভে এমন কোন রোগ নেই, যার টিকা বের করেনি। কিন্তু ক্ষতির দিক দিয়ে প্রায় সমস্ত টিকাই এক ঝাঁকের কৈ। আমরা ছোট-বড় অনেক রোগের হাত থেকে বাঁচার জন্য টিকা নেই, অথচ চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা বলেন যে ঐসব রোগে আক্রান্ত হওয়া বরং আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।

প্রচলিত চিকিৎসা ব্যবস্থার একটি সেরা বর্বরতা হলো ইনজেকশান। ব্যথা তো আছেই তাছাড়া অনেক সময় ইনজেকশানের সাথে যদি সামান্য ময়লাও শরীরে ঢুকে যায়, সেক্ষেত্রে ইনজেকশানের জায়গাটি পেকে ফোলে যেতে পারে। এসব ক্ষেত্রে অনেক সময় অপারেশন করে পূঁজ বের করতে হয়, ঘা শুকাতেও অনেক দিন লেগে যায়। তাছাড়া যেই পেশীতে ইনজেকশান দেওয়া হয়েছে, সেই পেশীটি সারা জীবনের জন্য ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। ফলে এমনও হতে পারে যে, আপনার ইনজেকশান নেওয়া হাতের কর্মশক্তি কমে যেতে পারে। অনেকে ভীষণ অনিচ্ছা সত্ত্বেও ইনজেকশান নেন এবং নিজের বাচ্চাদেরকেও জোর করে ইনজেকশান নিতে বাধ্য করেন। কারণ তারা ভাবেন ইহার কোন বিকল্প ব্যবস্থা নাই। প্রকৃতপক্ষে ইহা একটি ভুল ধারণা। যে-কোন ইমারজেন্সী রোগের জন্যই ইনজেকশানের বদলে আপনি হোমিওপ্যাথিক ঔষধ পাবেন। হউক তা এটিএস ইনজেকশান, কুকুরে কামড়ানোর ইনজেকশান, শিশুদের বা বড়দের যে-কোন টিকা, হাই পাওয়ারের এন্টিবায়োটিক ইনজেকশান কিংবা জীবনরক্ষাকারী কোরামিন/ ওরাডেক্সন ইনজেকশান। আর এসব হোমিও ঔষধ কাজও করবে ইনজেকশনের চাইতে অন্তত দশগুণ দ্রুত এবং এদের সাইড ইফেক্ট একেবারে নাই বললেই চলে। তবে এজন্য হোমিও ঔষধের গুণাগুণ ও ব্যবহার সম্পর্কে আপনার ভালো পড়াশুনা থাকতে হবে অথবা কোন হোমিওপ্যাথিক বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছে যেতে হবে। অনেকে আবার একটু দুর্বল লাগলেই স্যালাইন ইনজেকশান (Intra Venus saline) নেওয়ার জন্য পাগল হয়ে যায়। সাধারণ মানুষের মনে করে মুখে খাওয়ার স্যালাইনের চাইতে আই.ভি. স্যালাইন বেশী উপকারী। অথচ বাস্তবতা হলো তার ঠিক উল্টো ; কেননা আই.ভি. স্যালাইনে থাকে দুইটি ঔষধ, পক্ষান্তরে খাবার স্যালাইনে থাকে চারটি ঔষধ। যে-কোন ঔষধ মুখে খাওয়া আর সরাসরি রক্তনালীতে ইনজেকশান করে ঢুকিয়ে দেওয়ার মধ্যে আসলে তেমন কোন পার্থক্য নাই। কেননা আমরা ঔষধ, খাবার-দাবার যা কিছুই খাই না কেন, দশ-পনের মিনিটের মধ্যেই সেটি শোষিত হয়ে রক্তে চলে যায়। আই.ভি. স্যালাইন হলো তাদের জন্য যারা কোন সঙ্গত কারণে মুখে খেতে পারেন না অথবা মুখে খেতে পারলেও বমির জন্য তা পেটে রাখতে পারেন না। সে যাক, নিজের এবং নিজের পরিবারের সদস্যদের ডাক্তার বা হাসপাতালে দৌড়াঁনোর ঝামেলা থেকে বাঁচাতে পনের-বিশটি জরুরি হোমিও ঔষধ অল্প পরিমাণে কিনে সর্বদা ঘরে জমা রাখা উচিত এবং সাথে প্রেসক্রাইবার গাইড, পারিবারিক চিকিৎসা ইত্যাদি ধরণের দুয়েকটা হোমিও বই। আরেকটি কথা মনে রাখবেন, যে রোগ ছয়মাস এলোপ্যাথিক ঔষধ খেয়েও সারেনি ; তা ষাট বছর এলোপ্যাথিক ঔষধ খেলেও সারবে না। এই ক্ষেত্রে ভিন্ন পদ্ধতির চিকিৎসা অবলম্বন করা উচিত।

অনেক ডাক্তার আছেন এবং অনেক রোগীও আছেন, যারা হোমিওপ্যাথির নামই শুনতে পারেন না। অথচ হোমিওপ্যাথি হলো একমাত্র বৈজ্ঞানিক চিকিৎসা পদ্ধতি। মানুষ এলোপ্যাথিক চিকিৎসা পদ্ধতিকে বৈজ্ঞানিক মনে করলেও নিরপেক্ষ গবেষকদের মতে, এলোপ্যাথিতে দশ ভাগ আছে বিজ্ঞান আছে আর বাকী নব্বই ভাগই বিজ্ঞানের নামে গোজামিল। তারা কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের অনুসরণ করলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে আন্দাজ, অনুমান, কুসংস্কার, ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা, হোমিওপ্যাথির আংশিক অনুসরণ ইত্যাদি ইত্যাদির উপর ভিত্তি করে চিকিৎসাকার্য পরিচালনা করে থাকে। ইহারা রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসার নামে যদিও খুবই উচ্চ প্রযুক্তির যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে থাকুক না কেন ; আসলে সেগুলো হলো মানুষকে বোকা বানানোর এবং পকেট মারার এক ধরণের অত্যাধুনিক ফন্দি মাত্র। তাদের নানা রকমের চটকদার রঙের এবং ডিজাইনের দামী দামী ঔষধগুলো কোন জটিল রোগই সারাতে পারে না বরং চিকিৎসার নামে উপকারের চাইতে বরং ক্ষতিই করে বেশী। হোমিওপ্যাথির রয়েছে প্রতিষ্টিত বৈজ্ঞানিক নীতিমালা যা দুইশ বছরেও কোন পরিবর্তন হয়নি। হোমিওপ্যাথিতে একই ঔষধ দু’শ বছর পূর্বে যেমন কার্যকর ছিল, আজও তা সমান কার্যকর প্রমাণিত হচ্ছে বলেই সর্বত্র ব্যবহৃত হচ্ছে। পক্ষান্তরে কোন এলোপ্যাথিক ঔষধই দশ-বিশ বছরের বেশী কার্যকর থাকে না। একদিন যেই এলোপ্যাথিক ঔষধকে বলা হয় মহাউপকারী-জীবনরক্ষাকারী, কয়েক বছর পরই তাকে বলা হয় অকার্যকর-ক্ষতিকর-বর্জনীয়। আজ যেই ঔষধের নাম মানুষের মুখে মুখে ফিরে, কাল সেটি হারিয়ে যায় ইতিহাসের পাতা থেকে।

বাজারে আসা যে-কোন নতুন ঔষধ ব্যবহার থেকে সযত্নে দূরে থাকা বুদ্ধিমানের কাজ। কেননা অতীতে যে-সব ঔষধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া অথবা বিষক্রিয়ায় হাজার হাজার লক্ষ লক্ষ মানুষ ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মরেছে ; সে-সব ঔষধও প্রথম বাজারে ছাড়ার সময় ঔষধ কোম্পানীগুলো “খুবই নিরাপদ, পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াহীন, খুবই কার্যকর, যাদুকরী ক্ষমতাসম্পন্ন” ইত্যাদি ইত্যাদি নানান অভিধায় অভিহিত করেছিল। সেজন্য পুরনো ঔষধগুলো ব্যবহার করাই নিরাপদ ; কেননা তাদের কি কি পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া আছে, তা ইতিমধ্যে সবার জানা হয়ে গেছে। ১৯৬৪ সালে যখন এলোপ্যাথিক ঔষধ থেলিডোমাইড (thalidomide) মার্কেটে আসে, তখন দাবী করা হয়েছিল যে, এটি টেনশানের বা মাথা ঠান্ডা রাখার কিংবা নিদ্রাহীনতার জন্য এ যাবত কালের সবচেয়ে ভালো এবং নিরাপদ ঔষধ। কিন্তু দুই বছরের মাথায় ১৯৬৬ সালে জানা যায় যে, যে-সমস্ত গর্ভবতী মহিলা থেলিডোমাইড খেয়েছেন, তারা হাত এবং পা বিহীন পঙ্গু, বিকলাঙ্গ সন্তানের জন্ম দিয়েছেন। পশ্চিম জার্মানীর স্বাস্থ্য বিভাগ একাই থেলিডোমাইড খাওয়ার ফলে দশ হাজার বিকলাঙ্গ শিশুর জন্মের ঘটনা রেকর্ড করেছে। সত্যিকার অর্থে এটি ছিল চিকিৎসা বিজ্ঞানের ইতিহাসে সবচেয়ে জঘন্য এবং নির্মম ঘটনা। ভালো রকমের পরীক্ষা-নিরীক্ষা, যাচাই-বাছাই ছাড়াই মার্কেটে ঔষধ ছেড়ে দেওয়া হলো এলোপ্যাথিক ঔষধ কোম্পানীগুলোর কয়েক শতাব্দীর পুরনো অভ্যাস। প্রথম যখন জন্ম নিয়ন্ত্রণের বড়ি মার্কেটে আসে, তখন তাতে ঔষধের (মানে হরমোনের) পরিমাণ ছিল এখনকার তুলনায় অনেক বেশী। ফলে কয়েক বছরের মধ্যেই যখন প্রমাণ পাওয়া গেলো যে, জন্ম নিয়ন্ত্রণের বড়ি খাওয়া লক্ষ লক্ষ মহিলা স্তন ক্যান্সার ও জরায়ু ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মরেছে ; তখন তাতে হরমোণের পরিমাণ অনেক কমিয়ে দেওয়া হলো। কিন্তু এখনও বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত যে, অধিকাংশ স্তন ক্যান্সার এবং জরায়ুর ক্যান্সারের জন্য এসব জন্ম নিয়ন্ত্রণের বড়ি দায়ী। অন্যদিকে যে-সব মহিলা জন্ম নিয়ন্ত্রণের বড়ি খায়, তাদের সন্তানদের ওপর কি কি গযব পড়ে, তা আজও জানা যায় নাই। এসব নিয়ে গবেষণা করার কোন লোক পাওয়া যাবে না। কেননা নিজের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানোর মানসিকতা কয়জনের আছে ? আর ঔষধ কোম্পানীগুলো এমন কোন গবেষণা করবে না, যা তাদের ব্যবসার ক্ষতি করে। বিশেষজ্ঞদের মতে, দুটি বিশ্বযুদ্ধে হিটলারের বাহিনীর হাতে যত লোক না মরেছে, তার চাইতে অনেক বেশী লোকের মৃত্যু হয়েছে বড় বড় ঔষধ কোম্পানীগুলোর সীমাহীন লালসার কারণে। হিটলারের বাহিনীর বিচার হয় কিন্তু এসব নরঘাতক ঔষধ কোম্পানীর মানুষ হত্যার কোন বিচার হয় না। টাকার জোরে এরা আইন-আদালত, কোন কোন দেশের সরকার, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, এমনকি জাতিসংঘকে পযর্ন্ত কিনে ফেলে। কারণ এগুলো তো মানুষরাই চালায় আর মানুষ মাত্রই টাকার কাছে দুর্বল।

অপারেশন হলো চিকিৎসার নামে আরেকটি ক্ষতিকর ধ্বংসাত্মক কাজ। এলোপ্যাথিক ডাক্তাররা অধিকাংশ রোগের চিকিৎসাতেই অপারেশনের সাহায্য নিয়ে থাকেন। ইহার কারণ অধিকাংশ জটিল রোগই এলোপ্যাথিক ঔষধে নিরাময় হয় না। ফলে তারা কাটাকুটি করে রোগ সারানোর চেষ্টা করেন। তাছাড়া অপারেশন করতে পারলে ডাক্তারদের আয়-রোজগারও বৃদ্ধি পায় অর্থাৎ ডাক্তারদের জন্য অস্ত্র চিকিৎসার বিষয়টি বেশ লাভজনক। কিন্তু আফসোসের বিষয় হলো অপারেশনে শতকরা ৯৯ ভাগ ক্ষেত্রে রোগ সারে না বরং তা আরো মারাত্মক রূপ ধারণ করে কিছুদিন পর একই জায়গায় অথবা শরীরের অন্যত্র কিংবা মানসিক রোগ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। কারণ অপারেশনের মাধ্যমে কেবল রোগের ফলটা দূর করা যায় কিন্তু রোগের কারণটা দূর করা যায় না। রোগের কারণটা কিন্তু বহাল তবিয়তে থেকেই যায়। ফলে ছুরির ঘা খেয়ে সেটি আরও মারাত্মক রোগের আকৃতিতে প্রকাশ পায়। পেট ব্যথা, মাথা ব্যথা, হাঁপানি, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ইত্যাদি ইত্যাদি অগণিত নামে আমরা যত রোগ দেখি ; এগুলো প্রকৃতপক্ষে রোগ নয় বরং রোগের ফলাফল। রোগের ফলটা বস্তু স্তরে (physical level) প্রকাশ পায়, তাই এটি আমরা দেখতে পাই। কিন্তু রোগের কারণটা থাকে শক্তি স্তরে (energy level), তাই সেটি আমাদের দৃষ্টির আড়ালেই থেকে যায়। সে যাক, অপারেশনের ফলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায় রোগটি কম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ (যেমন-হাত, পা, চামড়া ইত্যাদি) থেকে চলে গিয়ে বেশী গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গকে (যেমন- হার্ট, লিভার, কিডনী, ব্রেন ইত্যাদিকে) আক্রমণ করে থাকে। মনে করুন আপনার ঘরের একটি গর্তে একটি সাপ ঢুকেছে এবং সাপের লেজটি দেখা যাচ্ছে। ইহার মানে হলো সাপটি আপনাকে কামড় দিতে পারে আবার কামড় না দিয়েও ভদ্রভাবে চলে যেতে পারে। কিন্তু আপনি যদি লেজটি দেখা যাচ্ছে ভেবে ছুরি দিয়ে সাপের লেজটি কেটে দেন, তবে এটি নিশ্চিত বলা যায় যে সাপটি ভীষণ ক্ষেপে যাবে এবং জীবন দিয়ে হলেও আপনাকে অন্তত একটি কামড় দেওয়ার চেষ্টা করবে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে অপারেশন হলো সাপের লেজ কেটে দেওয়ার মতো। আবার অনেক অপারেশন আছে যার ভাল-মন্দ, উপকার-ক্ষতি ইত্যাদি ভালোমতো পরীক্ষা না করেই কোটি কোটি লোকের ওপর প্রয়োগ করা হয়েছে। যেমন পুরুষদের জন্ম নিয়ন্ত্রণের অপারেশন ভ্যাসেকটমী (Vasectomies)। প্রায় অর্ধশতাব্দি যাবত এটি একটি জনপ্রিয় অপারেশন এবং বিশ্বব্যাপী কোটি কোটি প্রাপ্ত বয়ষ্ক পুরুষ ইতিমধ্যে এই অপারেশন করেছেন। এতে অণ্ডকোষের একটি নালীকে কেটে দেওয়া হয় অথবা বেধে দেওয়া হয় যাতে শুক্রাণু বের হতে না পারে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে, ভ্যাসেকটমী অপারেশনের সাথে অণ্ডকোষের ক্যান্সার, প্রোস্টেট গ্ল্যাণ্ডের ক্যান্সার, হৃদরোগ, ইমিউনিটির গণ্ডগোল, যৌনকর্মে আকর্ষণ কমে যাওয়া, অকাল বার্ধক্য ইত্যাদি রোগের সম্পর্ক আছে। স্কটল্যাণ্ডের ভ্যাসেকটমী করা ৩০০০ পুরুষের মধ্যে পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে যে, অপারেশনের চার বছরের মধ্যে ৮ জন অণ্ডকোষের ক্যান্সারে (testicular cancer) আক্রান্ত হয়েছেন।

আবার কিছু অপারেশন আছে যা ফ্যাশান হিসেবে চালু করা হয়েছে। যেমন ছোট স্তনকে বড় করার অপারেশন। মিডিয়াতে যখন বড় স্তনকে আকর্ষণীয়-লোভনীয় হিসেবে দেখানো শুরু হলো তখন সার্জনরা চিন্তা করলেন যে, অপারেশন করে স্তন বড় করার একটি কালচার চালু করতে পারলে ভালো আয়-রোজগার হবে। তখন তারা প্রচার করতে লাগলো যে, এই অপারেশনে স্বাস্থ্যের কোন ক্ষতি হয় না। ফলে বিগত তিন দশকে কেবল আমেরিকাতেই বিশ লক্ষ মহিলা এই অপারেশন করে তাদের স্তন বড় করে ফেললো। ১৯৯২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ঔষধ কর্তৃপক্ষ (FDA) ডাক্তারদের এই অপারেশন বন্ধ করার অনুরোধ জানায় ; কেননা সর্বশেষ গবেষণায় দেখা গেছে ইহার ফলে দুর্বলতা, শরীরের রোগ প্রতিরোধ শক্তি (immune system) ধ্বংস হওয়া, স্মরণশক্তি কমে যাওয়া, স্নায়বিক ক্লান্তি, দীর্ঘস্থায়ী জ্বর প্রভৃতি সমস্যা দেখা দেয়। এলোপ্যাথিক ডাক্তাররা যে-সব রোগ সারানোর জন্য ছুরি চালায়, তাদের শতকরা ৯৫ ভাগ রোগ হোমিওপ্যাথিতে বিনা অপারেশনে কেবল ঔষধেই সারানো যায়। অনেকে আশ্চর্য হতে পারেন যে, হার্টের ভাল্ব নষ্ট হওয়া, হার্টে পেস-মেকার লাগানো, হার্টের বাইপাস সার্জারী ইত্যাদির মতো বড় বড় অপারেশনের কেসও হোমিওপ্যাথিতে স্রেফ ঔষধেই নিরাময় করা যায়। কিন্তু তারপরও অধিকাংশ রোগী ঔষধ খেয়ে রোগ সারানোর চাইতে অপারেশন করে রোগ সারানোকে ভালো মনে করেন। তাদের মতে অনেক দিন ঔষধ খাওয়া ঝামেলার ব্যাপার; তার চাইতে সাতদিন হাসপাতালের বেডে শুয়ে থাকা অনেক সহজ। অপারেশন প্রীতির মূল কারণ হলো সাধারণ মানুষ জানে না যে, অপারেশনে রোগ ভাল না হয়ে বরং আরো খারাপ জায়গায় চলে যায় এবং বেশী বেশী অপারেশন করলে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

কোন কোন নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞ মনে করেন টনসিলকে যত তাড়াতাড়ি অপারেশন করে ফেলে দেওয়া যায় ততই মঙ্গল আবার কোন কোন নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞ মনে করেন টনসিল কেটে ফেলে দেওয়াতে কোন উপকার নেই বরং এটি সাংঘাতিক ক্ষতিকর কাজ। কোন কোন ডাক্তার মনে করেন আলসারের রোগীদের দুধ এবং দুধের তৈরী খাবার বেশী বেশী খাওয়া উচিত আবার অন্যদিকে অনেক ডাক্তার মনে করেন এগুলো প্রাগৌতিহাসিক আমলের চিন্তা-ভাবনা (এবং অবশ্যই বর্জনীয়)। আশ্চর্যের ব্যাপার হলো, এতো ফ্যাসাদের পরও অধিকাংশ এলোপ্যাথিক ডাক্তারই বিশ্বাস করেন যে, তাদের সকল কর্মকাণ্ড একেবারে (শতভাগ বিজ্ঞানসম্মত এবং কোন প্রকার সন্দেহ আর) প্রশ্নের উর্ধে।

আমাদের দেশে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা সম্পর্কে প্রচলিত অনেকগুলো ভুল ধারণার মধ্যে কয়েকটি হলো হোমিও ঔষধ দেরিতে কাজ করে, ধীরে ধীরে কাজ করে, হোমিও ঔষধ শিশুদের জন্য ভালো কিন্তু বড়দের ক্ষেত্রে কাজ করে না, হোমিও ঔষধের কোন সাইড ইফেক্ট নাই, জরুরি অবস্থায় হোমিও চিকিৎসা করা ঠিক না ইত্যাদি ইত্যাদি। আসলে আমাদের শরীর এবং মনের গঠন-প্রকৃতি যেমন জটিল, সেই কারণে আমাদের রোগ-ব্যাধির গঠন-প্রকৃতি এবং গতিবিধিও খুবই জটিল। ফলে হোমিওপ্যাথিও হয়েছে খুবই জটিল ; কেননা অন্যান্য চিকিৎসা পদ্ধতির মতো এটি কোন ভেজাল-গোজামিল বিজ্ঞান নয়, বরং একশ ভাগ খাঁটি ব্যবহারিক বিজ্ঞান। কাজেই হোমিওপ্যাথি খুবই জটিল চিকিৎসা বিজ্ঞান হওয়ার কারণে সবচেয়ে বেশী আই.কিউ. সম্পন্ন মেধাবী ছাত্রদের পক্ষেই সম্ভব একজন ভালো হোমিওপ্যাথিক ডাক্তার হওয়া। কিন্তু যেহেতু হোমিওপ্যাথি পড়লে সরকারী চাকুরি পাওয়া যায় না, বড় বড় পদ-পদবী জুটে না, এফসিপিএস-এফআরসিএস ইত্যাদি গাল ফোলানো ডিগ্রি পাওয়া যায় না ; এই কারণে ভালো মেধাবী ছাত্ররা সাধারণত হোমিওপ্যাথিক মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হয় না। ফলস্রুতিতে দেখা যায় যে, প্রকৃত যোগ্যতাসম্পন্ন, সুদক্ষ হোমিও ডাক্তারের সংখ্যা আমাদের দেশে খুবই কম। আর ইহাই হোমিওপ্যাথির সমস্ত বদনামের মূল কারণ। হোমিও ঔষধ অন্য যে-কোন ঔষধের চাইতেও অন্তত দশগুণ দ্রুত কাজ করে যদি লক্ষণ অনুযায়ী সঠিক ঔষধটি দেওয়া যায়। হোমিওপ্যাথিতে যেহেতু রোগের নামে কোন ঔষধ দেওয়া যায় না ; রোগের এবং রোগীর সমস্ত লক্ষণ বিচার করে ঔষধ দিতে হয়- এই কারণে সঠিক ঔষধটি খুঁজে বের করা এতোই কঠিন যে, সবচেয়ে এক্সপার্ট হোমিও ডাক্তারেরও শতকরা পঞ্চাশ ভাগ ক্ষেত্রে ভুল করার সম্ভাবনা আছে। অনেক রোগের ক্ষেত্রেই এলোপ্যাথিক বা অন্যান্য ঔষধ তো রোজ তিন-চার বেলা করে এক বা একাধিক সপ্তাহ খেতে হয় বা ইনজেকশান নিতে হয়। কিন’ সঠিক হোমিও ঔষধ যদি সঠিক শক্তিতে দেওয়া যায়, তবে জরুরি অসুখ-বিসুখ তো আছেই, এমনকি পঞ্চাশ বছরের পুরনো রোগও মাত্র এক ডোজ ঔষধেই সেরে যায়। দ্বিতীয় ডোজ ঔষধ খাওয়ারও প্রয়োজন হয় না। আর হোমিও ঔষধের কোন সাইড ইফেক্ট নাই, ইহাও একটি ভুল ধারণা। যুক্তির কথা হলো যার একশান আছে, তার রিয়েকশানও আছে। সঠিক তথ্য হলো, নিম্নশক্তিতে এবং মধ্যম শক্তিতে হোমিও ঔষধের সাইড ইফেক্ট খুবই কম ; একেবারে নাই বলার মতো। তবে উচ্চশক্তিতে যদি উল্টাপাল্টা ঔষধ খান, তবে আপনার বারোটা বেজে যেতে পারে। অনেকে মনে করেন, হোমিও ঔষধের মতো ইউনানী, আয়ুর্বেদিক এবং কবিরাজি ঔষধেরও কোন সাইড ইফেক্ট নাই। এটিও আরেকটি মহা ভুল ধারণা। লতাপাতার গুণাগুণ সম্পর্কে যাদের কোন জ্ঞান নাই, তারাই এই ধরণের কথা বলতে পারে। গাছপালা যদি এতই নিরাপদ হতো তবে ধুতরার বীচি খেলে মানুষ মরতো না !

অনেকে প্রত্যাশা করতে পারেন যে, চিকিৎসা কার্যে গোজামিল থাকলেও প্রচলিত রোগ নির্ণয় পদ্ধতি (pathology) নিশ্চয় একশ ভাগ বিজ্ঞানসম্মত। কেননা ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে খুবই উচ্চ প্রযুক্তির যন্ত্রপাতি ব্যবহৃত হয়ে থাকে। নিয়তির পরিহাস যে, বাস-ব পরিসংখ্যান এমনটা প্রমাণ করে না। সমপ্রতি দুইজন রোগ নির্ণয় বিজ্ঞানী (pathologist) ৪০০ রোগীর মৃতদেহ ময়না তদন- (autopsy- postmortem) করে দেখতে পেয়েছেন যে, অর্ধেকেরও বেশী রোগীর ক্ষেত্রে রোগ নির্ণয় ভুল ছিল। সহজ কথায় বলতে গেলে বলতে হয় যে, এদেরকে ভুল চিকিৎসা দেওয়া হয়েছিল এবং আরো সহজ কথায় বলতে গেলে বলা যায় যে, ভুল চিকিৎসার কারণেই এদের মর্মানি-ক অকালমৃত্যু হয়েছে। হায় ডাক্তার ! হায় রোগ নির্ণয় !! হায় ঔষধ!!! এই দুইজন প্যাথলজিষ্ট তাদের গবেষণায় আরো দেখিয়েছেন যে, অত্যাধুনিক সব প্যাথলজিক্যাল টেস্ট করার পরও ১৩৪ টি নিউমোনিয়ার কেইসে ৬৫ টির বেলায় ডাক্তাররা রোগ নির্ণয় করতে ব্যর্থ হয়েছে এবং ৫১ টি হার্ট এটাকের ক্ষেত্রে ১৮ টিতে। এজন্য বলা হয় যে, অজ্ঞতা এখনও ডাক্তারী পেশায় মাশায়াল্লাহ তার দাপট বজায় রেখেছে। হ্যাঁ, প্যাথলজিক্যাল টেস্ট হলো আরেকটি বড় ধরণের প্রতারণা। প্রথম কথা হলো ডাক্তাররা ডিগ্রি অর্জনের জন্য যত ব্যাপক পড়াশোনা করেন, তাতে ৯০ ভাগ রোগ তারা কোন প্রকার টেস্ট না করেই নির্ণয় করতে পারেন। রোগীকে পাঁচ-দশটি প্রশ্ন করলেই তিনি রোগ সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারেন। কিন’ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ডাক্তাররা এক বস-া টেস্ট দেন, তাদের দ্বায়িত্ব ফাঁকি দেওয়ার জন্য এবং ডায়াগনস্টিক কোম্পানির কাছ থেকে হাজার হাজার টাকা কমিশন খাওয়ার জন্য।

আবার অনেক সময় দেখা যায় যে, ডাক্তার সাহেব টেস্ট দেওয়া প্রয়োজন মনে করেন না অথচ রোগীরাই জোর করে টেস্ট লিখিয়ে নিচ্ছেন। ভাবখানা এমন যে, এসব টেস্ট করা খুবই জরুরি কিংবা শরীরের জন্য সাংঘাতিক উপকারী। হোমিও চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা অধিকাংশ প্যাথলজিক্যাল টেস্টকে একশ বছর আগেও ফ্যাশন মনে করতেন এখনও তাই মনে করেন। কেননা এগুলো অধিকাংশ ক্ষেত্রেই হাই-টেক প্রতারণা। যেমন ডাক্তাররা বলবে যে, রক্তের অমুক উপাদানের মাত্রা বেড়ে গিয়ে আপনার অমুক রোগ হয়েছে। তারপর এক বস-া ক্ষতিকর ঔষধ খাওয়ানোর পর দেখা গেলো যে, আপনার রক্ত পরীক্ষার রিপোর্ট স্বাভাবিক এসেছে। ডাক্তার বলবে, এখন আপনি সুস’ অথচ বাস-বে আপনার অবস’া আগে চাইতেও খারাপ হয়ে গেছে। আবার অনেক সময় ব্লাড টেস্ট, পায়খানা, প্রস্রাব, এক্সরে, আল্ট্রাসনোগ্রাম, ইসিজি, এমআরআই, সিটিস্ক্যান ইত্যাদি ইত্যাদি অসংখ্য টেস্ট করে রিপোর্ট দেখে বলবে, আপনার কোন রোগই নাই ; অথচ ব্যথার চোটে আপনার দম বেরিয়ে যাচ্ছে, ঘুম হারাম হয়ে গেছে। কেউ কেউ মনে করতে পারেন যে, এসব প্যাথলজিক্যাল টেস্টে কেবল টাকা নস্ট হয় কিন’ শরীরের কোন ক্ষতি হয় না। কিন’ এটি বিরাট ভুল ধারণা। রক্ত পরীক্ষার জন্য সুই দিয়ে ছিদ্র করে যখন রক্ত বের করা হয়, তাতে আপনার শরীরের অনেকগুলো স্মায়ু কোষ (nerve cell) ছিড়ে যায়। ফলে স্নায়ুতে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। আপনি যত বেশী ইনজেকশান নিবেন অথবা শরীরের উপর ছুরি-চাকু ব্যবহার করবেন, স্নায়ুতন’তে তত বেশী উত্তেজনার সৃষ্টি হবে। এভাবে বেশী বেশী উত্তেজনার ফলে আপনার কোষতন’তে বিদ্রোহ দেখা দিবে। আর ডাক্তারী ভাষায় কোষতন’র বিদ্রোহকে বলা হয় ক্যান্সার। হ্যাঁ, চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা মনে করেন যে, বিভিন্নভাবে আঘাতের মাধ্যমে স্নায়ুতন’কে উত্যক্ত করাই ক্যান্সারের মূল কারণ। তারপর আসে এক্স-রে। বেশী বেশী এক্স-রে করলে ক্যান্সার হয়, এটি বহু পুরনো কথা। আল্ট্রাসনোগ্রাম করা হয় খুবই সূক্ষ্মমাত্রার শব্দ তরঙ্গ (micro wave) ব্যবহার করে, যারা এমনকি জীবাণুকে পর্যন- ধ্বংস করতে পারে। কাজেই এটিও আপনার শরীরের ক্ষতি করে থাকে এবং শরীরের মধ্যে থাকা উপকারী জীবাণুকেও হত্যা করতে পারে। এমআরআই, সিটিস্ক্যান হলো এক ধরণের এক্স-রে। কাজেই এগুলো শরীরে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয় বহুগুণে।

ইদানীং আবার শুরু হয়েছে বিশেষজ্ঞদের (specialist) হুজুগ। মানুষ এখন আর ডাক্তারদের উপর ভরসা করতে চায় না। পান থেকে চুন খসলেই দৌড়ে যায় স্পেশালিষ্টের কাছে। অথচ চিকিৎসক সমাজে একটি কথা প্রচলিত আছে যে, একজন ভালো ডাক্তার দশজন বিশেষজ্ঞের সমান। অর্থাৎ বিশেষজ্ঞ হওয়া সহজ কিন’ একজন যথার্থ ডাক্তার হওয়া খুবই কঠিন কাজ। বিশেষজ্ঞরা যেহেতু খুবই ক্ষুদ্র এবং সংকীর্ণ একটি বিষয় নিয়ে তাদের জীবন কাটিয়ে দেয়, সেহেতু তাদের জ্ঞানের পরিধি এবং দৃষ্টিভঙ্গিও সংকীর্ণ হয়ে যায়। আমাদের শরীর-মনকে যদি সমুদ্রের সাথে তুলনা করা যায়, তবে বিশেষজ্ঞদের তুলনা করা যাবে খাল-বিলের দক্ষ মাঝি-মাল্লা হিসেবে। এখন ভেবে দেখুন, খালের মাঝিরা যদি কখনো সমুদ্রের ঝড়ের কবলে পড়ে, তবে চোখে-মুখে সর্ষে ফুল দেখবে কিনা ? হোমিও ডাক্তাররা এবং আরো অনেকেই এই বিশেষজ্ঞ প্রথাকে অযৌক্তিক এবং হাস্যকর মনে করতেন। ব্রিটিশ হোমিও চিকিৎসা বিজ্ঞানী ডাঃ বার্নেট বলতেন যে, রোগ চিকিৎসায় হোমিওপ্যাথির নীতিতে অটল একজন ছোট হোমিও ডাক্তারও যে যাদু দেখাতে পারবেন, তা দেখে দৈতাকৃতির এলোপ্যাথিক বিশেষজ্ঞও মহাবিস্মিত না হয়ে পারবেন না। মেডিক্যাল গবেষক বা চিকিৎসা বিজ্ঞানী নামে আমরা যাদের জানি, তাদের মধ্যে দুটি গ্রুপ আছে। তাদের সবচেয়ে বড় অংশটি কাজ করে বহুজাতিক ঔষধ কোম্পানিগুলো দালাল হিসেবে। তারা আবিষ্কারের নামে এমন সব উল্টাপাল্টা তথ্য প্রচার করে যাতে সংশ্লিষ্ট ঔষধ কোম্পানির ব্যবসা আঙুল ফোলে কলা গাছ হতে পারে। অন্যদিকে খুবই অল্পসংখ্যক চিকিৎসা বিজ্ঞানী আছেন, যারা মানুষকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষার জন্য বিবেকের তাড়ণায় গবেষণায় আত্মনিয়োগ করে সত্য উদঘাটন করেন। কিন’ তাদের আবিষ্কারকে মেডিক্যাল জার্নাল বা অন্যকোন মিডিয়া প্রচার করতে চায় না। কেননা ঔষধ কোম্পানিগুলো টাকা দিয়ে তাদের ব্যবসায়িক স্বার্থের পরিপন’ী এসব আবিষ্কারকে প্রচার না করতে বাধ্য করে।

এবার কোলেস্টেরলের (cholesterol) কাহিনী একটু বলা দরকার। ঔষধ কোম্পানীগুলি ঔষধের ভাল-মন্দ না জেনে পর্যাপ্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করেই কিভাবে ক্ষতিকর, ধ্বংসাত্মক ঔষধ বিশ্বব্যাপী কোটি কোটি মানুষকে পাইকারী হারে খাওয়াতে থাকে, এটি তার আরেকটি দৃষ্টান্ত। পাশ্চাত্যের ধনী দেশগুলোর অধিকাংশ লোকই মোটা-সোটা, নাদুস-নুদুস। কেননা তারা মাংস, তেল, চর্বি জাতীয় খাবার বেশী খায়। ফলে তাদের রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা অন্যদের চাইতে বেশী থাকে। বড় বড় ঔষধ কোম্পানিগুলো ভাবলো, রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে যাওয়াকে যদি একটি রোগ হিসেবে ঘোষণা করা যায় এবং এজন্য কোলেস্টেরলের মাত্রা কমানোর একটি ঔষধ বাজারে ছাড়া যায়, তবে আমাদের লাভের অংক মিলিয়ন ডলারের কোটা ছেড়ে বিলিয়ন ডলারের কোটায় পৌঁছে যাবে। ফলে তারা টাকা-পয়সা খরচা করে কিছু দালাল চিকিৎসা বিজ্ঞানীকে গবেষণা করার জন্য নিয়োগ দিলো। এই ভাড়াটে বিজ্ঞানীরা অল্প দিনের মধ্যেই ঘোষণা করলো যে, রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে গেলে উচ্চ রক্তচাপ এবং হার্ট এটাকের ঝুঁকি বেড়ে যায়। আর যায় কৈ ?

রাতারাতি কোলেস্টেরলের মাত্রা কমানোর ঔষধ মার্কেটে এসে গেলো এবং হার্ট এটাকের ভয়ে কোটি কোটি মানুষ সেগুলো পাইকারী হারে খাওয়া শুরু করলো। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে যে, ৯০-এর দশকে ঔষধ কোম্পানীগুলি সবচেয়ে বেশী লাভ করেছে কোলেস্টেরল কমানোর ঔষধ বিক্রি করে। ঔষধ কোম্পানিগুলি পছন্দ করে দীর্ঘমেয়াদী আন্তর্জাতিক মার্কেট আর ভোগবাদী মানুষ পছন্দ করে মজার মজার খাবার খাওয়া বন্ধ না করে বরং ট্যাবলেট খেয়ে ঝামেলা মুক্তি। অথচ পরবর্তীতে অনেক গবেষণায় দেখা গেছে যে, রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমানো কোনো বুদ্ধিমানের কাজ নয়। কেননা তাতে ছোট-খাটো দুর্ঘটনাতেই মৃত্যু ঘটার সম্ভাবণা আছে এবং আরেকটি বিপদ হলো রক্তে কোলেস্টরলের পরিমাণ কমে গেলে আত্মহত্যা করার ইচ্ছা বেড়ে যায় আবার ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়। শুধু তাই নয়, চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের একটি অংশ মনে করেন যে, কোলেস্টেরলের মাত্রা বেশী কমে গেলে ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায় বিপদজ্জনকভাবে। কিন্তু কে শোনে কার কথা, ঔষধ কোম্পানীগুলোর প্ররোচনায় ডাক্তাররা এখনও হরদম এসব ঔষধ মানুষকে গিলিয়ে যাচ্ছেন।

চিকিৎসা পেশার প্রায় সব শাখায় বৈজ্ঞানিক তথ্য-প্রমাণের অভাব এতই বেশী যে, এটি এখন গাঁ সওয়া হয়ে গেছে। নিতান্ত অল্প কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া ইহাতে নিশ্চিত বলে কোন ব্যাপার নেই। রোগী ডাক্তারের কাছ থেকে কি পাবে তা নির্ভর করে বিজ্ঞানের ওপর নয় বরং ভাগ্যের ওপর এবং ডাক্তারের মানসিক অবস্থার ওপর। ডাক্তারদের উভয় সঙ্কট (The doctor’s dilemma) নামক নাটকের ভূমিকায় জর্জ বার্নার্ড শ দেখিয়ে ছিলেন যে, একবার ইংল্যাণ্ডের এক ইনফ্লুয়েঞ্জা মহামারীর সময় একজন সাংবাদিক রোগীর অভিনয় করে তখনকার দিনের সেরা চিকিৎসকদের পরামর্শ নিয়েছিলেন। পরদিন নামকরা সকল চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন পত্রিকায় ছাপিয়ে ছিলেন যাতে দেখা যায় যে, তিনি সকল চিকিৎসককে একই সমস্যার কথা বললেও প্রত্যেক ডাক্তারের পরামর্শ ছিল ভিন্ন ভিন্ন (দুইজন ডাক্তারের প্রেসক্রিপশনের মধ্যেও মিল পাওয়া যায় নাই)। এই ঘটনার পর প্রায় একশ বছর কেটে গেলেও অবস্থার তেমন হেরফের হয়নি (যদিও এখন চিকিৎসার কাজে উচ্চ প্রযুক্তির চরম ব্যবহার হচ্ছে) ; বিশ্বাস না করলে এখনও আপনি একই রোগের জন্য দশজন ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে দেখতে পারেন। এমনকি একই রোগের জন্য আপনাকে কতদিন হাসপাতালের বেডে শুয়ে থাকতে হবে, তাও একেক ডাক্তারের ক্ষেত্রে একেক রকম হবে। কাউকে কাউকে আবার দেখা যায়, ডাক্তারদের কাছ থেকে জোর করে ঔষধ লিখিয়ে নেন। হয়ত সামান্য একটু কেটে গেছে, ডাক্তার সাহেব বললেন এরকম ছোটখাটো ব্যাপারে ধনুষ্টংকারের টিকা (এটিএস) নেওয়ার প্রয়োজন নাই। কিন্তু রোগী বলবে, “না ডাক্তার সাহেব, ভয় করতেছে, একটি এটিএস ইনজেকশান দিয়ে দেন”। ফলে বাধ্য হয়ে রোগীকে খুশি করার জন্য তিনি এটিএস লিখে দেন। ডাক্তার সাহেব জানেন যে, এটিএস ইনজেকশান যে-কারো ওপর রিয়েকশান করতে পারে এবং তাতে রোগীর বিরাট ক্ষতি এমনকি মৃত্যুও হতে পারে। কাজেই অপ্রয়োজনে ইহার নিকটবর্তী না হওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ কিন্তু রোগীদের তো আর এতো কিছু জানা থাকে না।

আপনাকে বুঝতে হবে যে, আপনার প্রিয় অথবা অতি প্রিয় ডাক্তার সাহেব আসলে সব জানেন না। আবার ক্ষেত্র বিশেষে সবই জানেন, কিন্তু ইচ্ছে করলেই তিনি সবকিছু করতে পারেন না। কেননা তিনিও একটি সিস্টেমের হাতে বন্দী হয়ে আছেন। যে-কোন প্রতিষ্টিত দুষ্ট চক্রের বাহুজাল ছিন্ন মুক্ত-স্বাধীন হতে গেলে যে অপরিসীম ত্যাগ ও সাহস দরকার, তা কেবল মহাপুরুষদের মধ্যেই থাকে। আর বাস্তবতা হলো সব ডাক্তারই মহাপুরুষ নন। হোমিওপ্যাথির আবিস্কারক জার্মান চিকিৎসা বিজ্ঞানী মহাত্মা ডাঃ স্যামুয়েল হ্যানিম্যান ছিলেন এমনই একজন মহাপুরুষ। আজ থেকে দুশ বছর পূর্বে হ্যানিম্যানের সময় এলোপ্যাথিক চিকিৎসা পদ্ধতি ছিল চরম বর্বরতার সমতুল্য। তখনকার দিনের এলোপ্যাথিক ডাক্তাররা উচ্চ রক্তচাপসহ অধিকাংশ রোগের চিকিৎসার জন্যই রোগীর শরীরে অনেকগুলো জোঁক লাগিয়ে দিতো অথবা রগ কেটে রক্ত বের করত, মানসিক রোগীকে ভুতে ধরেছে মনে করে পিটিয়ে লাশ বানিয়ে ফেলত, একটি রোগের জন্য ক্ষেত্র বিশেষে পনের থেকে বিশটি ঔষধ রোগী খাওয়ানো হতো ইত্যাদি ইত্যাদি। হ্যানিম্যান কিন্তু অন্যান্য ডাক্তারদের মতো ডাক্তারী পাশ করে মাল কামানোর পেছনে লেগে যান নাই; বরং চিকিৎসার নামে এসব বর্বরতা থেকে মানবজাতিকে কিভাবে মুক্ত করা যায় তা নিয়ে যুগের পর যুগ গবেষণা করেছেন।

এজন্য তাকে অভাব-অনটন, দুঃখ-কষ্ট, অপমান-লাঞ্ছনা, হুমকি-ধামকি, দেশ থেকে বহিষ্কার প্রভৃতি অনেক অনেক ভোগান্তি সহ্য করতে হয়েছে কিন্তু তারপরও তিনি পিছপা হননি। ফলে রোগের উৎপত্তি, রোগের চিকিৎসা, ঔষধ আবিষ্কার, ঔষধ প্রস্তুত প্রণালী, ঔষধের ব্যবহার ইত্যাদি বিষয়ে তিনি অনেকগুলো বৈজ্ঞানিক সূত্র আবিষ্কার করতে সক্ষম হন। ডাক্তারদের মধ্যে পেশাগত অহমিকা, লোভ, হিংসা ইত্যাদি যে কত বেশী মাত্রায় আছে, তার প্রমাণ হলো হোমিওপ্যাথির আবিষ্কার। রোগীকে কষ্ট না দিয়ে, কম খরচে এবং কম সময়ের মধ্যে রোগ নিরাময়ের স্বার্থে চিকিৎসা বিজ্ঞানের এই অমূল্য আবিষ্কারকে যেখানে সকল চিকিৎসকের সাদরে গ্রহন করা উচিত ছিল, সেখানে দেখা গেছে নব্বইভাগ ডাক্তারই হ্যানিম্যানের এই অমূল্য আবিষ্কারকে প্রত্যাখ্যান করেছিল। ফলে চিকিৎসা বিজ্ঞান এলোপ্যাথি এবং হোমিওপ্যাথি নামে দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। শুধু তাই নয়, আজ থেকে একশ বছর পূবে ইউরোপে এবং আমেরিকায় এলোপ্যাথিক ডাক্তাররা প্রথম যখন সমিতি গঠন করেছিল, তখন তাদের অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল পৃথিবীর বুক থেকে (একটি মানবতাবাদী চিকিৎসা বিজ্ঞান) হোমিওপ্যাথিকে নিশ্চিহ্ন করা। বাণিজ্যের কাছে সেবাধর্ম কিভাবে পরাজিত হয়, এসব ইতিহাস সবারই জানা থাকা উচিত।

মনে রাখতে হবে যে, আপনার শরীর, আপনার মন, আপনার জীবন- এসবই আপনার অমূল্য সম্পদ। কাজেই এগুলোর ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার সকল ক্ষমতা কেবল ডাক্তারের হাতে ছেড়ে দেওয়া উচিত নয়। সিদ্ধান্ত নিতে হবে আপনার নিজেকেই। যদি কোন কঠিন রোগে আক্রান্ত হন, তবে এলোপ্যাথিক এবং হোমিওপ্যাথিক উভয় ধরণের ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে তারপর সিদ্ধান্ত নিন। প্রয়োজনে ইউনানী, আয়ুর্বেদিক এবং ন্যাচারোপ্যাথিক ডাক্তারেরও পরামর্শ নিন। সবচেয়ে ভালো হয় প্রচলিত সব ধরণের চিকিৎসা পদ্ধতির বই কিনে সেগুলো পড়ে দেখুন আপনার রোগের চিকিৎসার ব্যাপারে তাতে কি লেখা আছে। যেহেতু রোগ-ব্যাধি সবারই হয়ে থাকে, সেহেতু প্রত্যেক পরিবারের অন্তত একজন সদস্যের হলেও চিকিৎসা বিষয়ক বই-পুস্তক পড়ার অভ্যাস থাকা উচিত। আর এভাবেই আমরা নিজেদেরকে সর্বনাশের হাত থেকে রক্ষা করতে পারি।

ডাঃ বশীর মাহমুদ ইলিয়াস

লেখক, ডিজাইন স্পেশালিষ্ট, হোমিও কনসালটেন্ট

চেম্বার ঃ জাগরণী হোমিও হল

৪৭/৪ টয়েনবী সার্কুলার রোড (৩য় তলা),

(ইত্তেফাক মোড়ের পশ্চিমে এবং ষ্টুডিও ২৭-এর সাথে)

মতিঝিল, ঢাকা।

ফোন ঃ +৮৮০-০১৯১৬০৩৮৫২৭

E-mail : Bashirmahmudellias@hotmail.com

Website : http://bashirmahmudellias.blogspot.com

Author: bashirmahmudellias

I am an Author, Design specialist, Islamic researcher, Homeopathic consultant.

Leave a comment