Dr. Bashir Mahmud Ellias's Blog

Know Thyself

প্রচলিত মিলাদ কিয়াম ভাল এবং সওয়াবের কাজ

Leave a comment

প্রচলিত মিলাদ মাহফিলের শরয়ীহুকুম

মাওলানা সৈয়দ আব্দুল মুঈদ আল মুত্তাকী

মিলাদ ও কেয়ামের ইতিহাস:
(১)
প্রথম মিলাদ ও কেয়াম কে করেছিলেন?
পবিত্র মিলাদুন্নবীর ইতিহাস অতি প্রাচীন । মিলাদুন্নবীর সুচনা করেছেন স্বয়ং আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ।
রোজে আজলে সমস্ত আম্বিয়ায়ে কেরামেকে নিয়ে আল্লাহ এই মিলাদের আয়োজন করেছিলেন । নবীগণের মহাসম্মেলন ডেকে মিলাদুন্নবী আয়োজক স্বয়ং আল্লাহ তা’য়ালা। তিনি নিজে ছিলেন সম্মেলনের সভাপতি ও একমাত্র আলোচক।আর সকল নবীগণ ছিলেন শ্রোতা । ঐ সম্মেলনের উদ্দেশ্য ছিল, হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াছাল্লামের বেলাদাত, শান ও মান অন্যান্য নবীগণের সামনে তুলে ধরা এবং তাঁদের থেকে তাঁর উপর ঈমান আনয়ন ও সাহায্য সমর্থনের প্রতিশ্রুতি আদায় করা । কুরআন মাজীদের সূরা আলে ইমরানে ৮১-৮২ নং আয়াতে মধ্যে আল্লাহ তায়ালা ঐ মিলাদুন্নবী মাহফিলের কথা উল্লেখ করেছেন । নবীজীর সম্মানে এটাই ছিল প্রথম মিলাদ মাহফিল এবং মিলাদ মাহফিলের উদ্যোক্তা ছিলেন স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা।
সুতরাং মিলাদে মাহফিল আনুষ্ঠান হচ্ছে আল্লাহর সুন্নত বা তরিকা।

(২)
ঐ সম্মেলনে সমস্ত আম্বিয়ায়ে কেরাম উপস্থিত ছিলেন। সেখানে স্বয়ং আল্লাহ পাক নবীজীর শুধু আবির্ভাব বা মিলাদের উপরই গুরুত্ব আরোপ করেছিলেন। সিরাতুন্নবীর উপর কোন আলোচনা সে দিন হয়নি। সমস্ত নবীগণ খোদার দরবারে দন্ডায়মান থেকে মিলাদ শুনেছেন এবং কিয়াম করেছেন। কেননা খোদার দরবারে বসার কোন অবকাশ নেই। পরিবেশটি ছিল আদবের। মিলাদ পাঠকারী ছিলেন স্বয়ং আল্লাহ এবং কিয়ামকারীগন ছিলেন আম্বিয়ায়ে কেরাম।
এই মিলাদ ও কিয়াম কোরআনের ” ইকতেদো উন নস ” দ্বারা প্রমানিত হলো : উল্লেখ্য যে কুরআন মজিদের “নস” চার প্রকার যথা : ইবারত , দালালত , ইশারাও ইক্কতিজা। উক্ত চার প্রকার দ্বারাই দলিল সাবেত হয়। ( নুরূল আনওয়ার দেখুন ) নিম্নে উল্লেখিত আয়াতের মধ্যে ইবারতের দ্বারা প্রমানিত হয়েছে অঙ্গীকার / দালালাতের দ্বারা নবীগনের মাহফিল , ইশারার দ্বারা মিলাদের বা আবির্ভাবের এবং ইকতিজার দ্বারা কিয়ামর প্রমানিত হয়েছে ।
সুতরাং, মিলাদুন্নবী মহফিল কেয়াম নবীগনের সম্মিলিত সুন্নাত ও ইজামায়ে আম্বিয়া দ্বারা প্রতিষ্ঠিত ।

(৩)
কোরআন মজিদে আলে এমরানের আয়াত ৮১-৮২ উল্লেখ করা হলো :

অর্থাৎ, “হে প্রিয় রাসুল! আপনি স্মরণ করুন ঐ দিনের কথা, যখন আল্লাহ তায়ালা সমস্ত নবীগন থেকে প্রতিশ্রুতি নিয়েছিলেন এ কথার উপর যে, যখন আমি তোমাদেরকে কিতাব ও হিকমত দিয়ে দুনিয়ায় প্রেরন করবো; তারপর তোমাদের কাছে আমার মহান রাসুল যাবেন এবং তোমাদের নবু্য়ত ও কিতাবের সত্যতার সাক্ষ্য প্রদান করবেন, তখন তোমরা অবশ্য অবশ্যই তাঁর উপর ঈমান আনবে এবং অবশ্যই তাঁকে সাহায্য করবে।” আল্লাহ বলেন, “তোমরা কি এ সব কথার উপর অঙ্গীকার করছো এবং এই শর্তে আমার ওয়াদা গ্রহন করে নিয়েছো? (তখন) তাঁরা সকলেই সমস্বরে বলেছিলেন, হ্যাঁ আমরা অঙ্গিকার করছি। আল্লাহ বলেন,
“তাহলে তোমরা পরস্পর সাক্ষি থাক। আর আমি ও তোমাদের সাথে মহাসাক্ষী রইলাম।”

অর্থাৎ, ” অত:পর যে কোন লোক এই অঙ্গীকার থেকে ফিরে যাবে- সেই নফরমান ” (কাফের )। ( আলে এমরান আয়াত ৮১/৮২ )।
উক্ত দুটি আয়াতে মধ্যে নবী করিম (দ) -এর ব্যাপারে ১০ টি বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে । যথা :
১ । এই ঐতিহসিক মিলাদ সম্মেলনের ঘটনাবলীর প্রতি রাসুলে কারিম (দ) -এর দৃষ্টি আকর্ষণ । যেহেতু নবী করিম (দ) ঐ সময়ে সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ।
২। আল্লাহ কর্তৃক অন্যান্য আম্বিয়ায়ে কেরামের নিকট থেকে নবীজীর শানে অঙ্গীকার আদায় ।
৩। নবীগনের রমরমা রাজত্বকালে এই মহান নবীর আগমন হলে তাঁর উপর ঈমান আনতে হবে ।
৪। তাঁর আগমন হবে অন্যান্য নবীগনেরর সত্যতর দলীল স্বরূপ ।
৫। ঐ সময়ে নবীগনের নবুয়ত স্থগিত রেখে- নবীজীর উপর ঈমান আনয়ন করতে হবে ।
৬।নবীজীকে সর্বাবস্থায় পুর্ন সাহায্য সহযোগিতা প্রদানের অঙ্গীকার আদায়। জীবনের বিনিময়ে এই সাহায্য হতে হবে নি:শর্তভাবে ।
৭। নবীগনের স্বীকৃতি প্রদান ।
৮। পরস্পর সাক্ষী হওয়া ।
৯। সকলের উপরে আল্লাহ মহাসাক্ষী ।
১০। ওয়াদা ভঙ্গের পরিনাম – নাফরমান ও কাফের ।
১০ নং দফায় নবীগনের উম্মত তথা ইয়াহুদী ও খৃষ্টানদের পরিনতির দিকেই ইঙ্গিত করা হয়েছে। কেননা নবীগগনের অস্বীকারের প্রশ্নই উঠে না। অস্বীকার করেছেন ইয়াহুদী ও নাসারাগন। সুতরাং তারাই কাফের।

(৪)
নবীগনের যুগে মিলাদুন্নবী:
১। হযরত আদম (আ) -এর যুগে মিলাদ প্রত্যেক নবী নিজ নিজ যুগে আমাদের প্রিয়নবী ও আল্লাহর প্রিয় হাবিবের আবির্ভাবের সুসংবাদ দিয়ে গেছেন । হযরত আদম (আ) তাঁর প্রিয় পুত্র ও প্রতিনিধি হযরত শীস (আ) কে নুরে মুহাম্মদীর তাজিম করার জন্য নিম্ন অসিয়ত করে গেছেন ।
আনুবাদ অংশ টি নিম্নে বর্ননা করা হলো ( আরবি অংশ পরবর্তিতে চেষ্টা করবো )
” আদম (আ) আপন পুত্র হযরত শীস (আ) কে লক্ষ্য করে বললেন, হে প্রিয় বৎস! আমার পরে তুমি আমার খলিফা । সুতরাং এই খেলাফত কে তাকওয়ার তাজ ও দৃঢ় একিনের দ্বারা মজবুত করে ধরে রেখো । আর যখনই আল্লাহর নাম ঝিকির (উল্লেখ) করবে তাঁর সাথেই মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লামের নামও উল্লেখ করবে । তাঁর কারন এই : আমি রূহ ও মাটির মধ্যবর্তী থাকা অবস্থায় ই তাঁর পবিত্র নাম আরশের পায়ায় (আল্লাহর নামের সাথে ) লিখিত দেখেছি । এরপর আমি সমস্ত আকাশ ভ্রমন করেছি । আকাশের এমন কোন স্থান ছিলনা যেখানে মুহাম্মাদ(দ) -এর নাম অন্কিত পাই নি । আমার রব আমাকে বেহেস্তে বসবাস করতে দিলেন । বেহেস্তের এমন কোন প্রাসাদ ও কামরা পাইনাই যেখানে মুহাম্মদ (দ) এর নাম ছিল না। আমি মুহাম্মদ ( দ) -এর নাম আরোও লিখিত দেখেছি সমস্ত হুরদের স্কন্ধ দেশে, বেহেশতের সমস্ত বৃক্ষের পাতায়, বিশেষ করে তুলা বৃক্ষের পাতায় পাতায়, পর্দার কিনারায় এবং ফেরেশতাগনের চোখের মনিতে ঐ নাম অঙ্কিত দেখেছি । সুতরাং হে শীস! তুমি এই নাম বেশী বেশী করে জপতে থাক। কেননা, ফেরেশতাগণ পুর্ব হতেই এই নাম জপনে মশগুল রয়েছেন।” (জুরকানি শরীফ)
উল্লেখ্য যে সর্ব প্রথম দুনিয়াতে ইহাই ছিল জিকরে মিলাদুন্নবী ( দ )।

(৫)
হযরত ইব্রাহীম (আঃ) এর মিলাদ পাঠ ও কেয়াম:
হযরত ইব্রাহীম (আঃ) এবং হযরত ইসমাইল (আঃ)যখন আল্লাহর ঘর তৈরী করছিলেন , তখন ইব্রাহীম (আঃ) উক্ত ঘরের নির্মাণ কাজ কবুল করার জন্য নিজের ভবিষ্যৎ সন্তানাদির মুসলমান হয়ে থাকার জন্য আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ করার পর দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বা কেয়াম করে নবী (দঃ) -এর আবির্ভাব আরবে ও হযরত ইসমাইলের বংশে হওয়ার জন্য এভাবে দোয়া করেছেন:

অর্থাৎ, “হে আমার রব! তুমি এই আরব ভুমিতে আমার ইসমাইলের বংশের মধ্যে তাদের মধ্যে হতেই সেই মহান রাসুলকে প্রেরণ করো। যিনি তোমার আয়াতসমুহ তাদের কাছে পাঠ করে শোনাবেন, তাদেরকে কুরআন সুন্নাহর বিশুদ্ধ জ্ঞান শিক্ষা দেবেন এবং বাহ্যিক ও আত্বিক অপবিত্রতা থেকে তাদের পবিত্র করবেন। (সুরা: আল বাকারা-১২৯)
এখানে দেখা যায় – হযরত ইব্রাহীম ( আঃ) রাসুলুল্লাহের ৪০০০ বৎসর পুর্বেই মুনাজাত আকারে তাঁর আবির্ভাব, তাঁর সারা জিন্দেগীর কর্ম ও মানুষের আত্নার পরিশুদ্ধির ক্ষমতা বর্ননা করে হুজুর (দ) -এর মিলাদের সারাংশ পাঠ করেছেন এবং এই মুনাজাত বা মিলাদ দন্ডায়মান অবস্থাই করেছেন। যা পুর্বের দুটি আয়াতের মর্মে বুঝা যায় ।
ইবনে কাছির তাঁর বেদায়া ও নেহায়া গ্রন্থে ২য় খন্ডের ২৬১ পৃষ্ঠায় লিখেছেন, “দোয়া ইবরাহিমু আলাইহিস সালামু ওয়াহুয়া কায়েমুন” অর্থাৎ, উক্ত দোয়া করার সময় ইব্রাহীম (আঃ) দন্ডায়মান ছিলেন ।

(৬)
নবী করিম (দ) বলেন, আনা দুয়াওতু ইবরাহীমা” আমি হযরত ইবরাহিমের (আঃ) এর দোয়ার ফসল।”
হযরত ইবরাহিম ( আঃ) আল্লাহর নিকট থেকে চেয়ে আমাদের প্রিয় নবী (দ) কে আরবের ইসমাইল (আঃ) -এর বংশে নিয়ে এসেছেন । এটা উপলব্ধির বিষয় ।
আশেক ছাড়া এ মর্ম অন্য কেউ বুঝবে না । বর্তমান মিলাদ শরীফে রাসুলে পাঁকের আবির্ভাবের যে বর্ননা দেয়া হয় -তা হযরত ইবরাহিম (আঃ)-এর দোয়ার ‍তুলনায় সামান্যতম অংশ মাত্র । সুতরাং আমাদের মিলাদ শরিফ পাঠ ও কেয়াম হযরত ইবরাহিম আলাহিস সালামেরই সুন্নাত । ( দেখুন বেদায়া ও নেহায়া ২য় খন্ড ২৬১ পৃষ্ঠ )

(৭)
মিলাদ মাহফিলে নবী করীম (সা.) এর সম্মানার্থে কিয়াম করা অর্থাৎ দাঁড়িয়ে সম্মান প্র্রদর্শন করা মুস্তাহাব এবং কিয়ামকারী এর মাধ্যমে মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে অনেক সাওয়াব ও মর্যাদার অধিকারী হয়ে থাকেন । কিয়ামকে নাজায়েয বলা নবী বিদ্বেষীর পরিচয় এবং মুসলিম সমাজকে ভাল কাজ থেকে বিরত রাখার অপচেষ্টা । আ’লা হযরত ইমামে আহলে সুন্নাত শাহ্ আহমদ রেযা (র.) “ইকামাতুল কিয়ামাহ্ আলা তা-ইনিল কিয়াম” নামক কিতাবে উল্লেখ করেছেন বিশিষ্ট ফকিহ ও মুহাদ্দিস আল্লামা ওসমান ইবনে হামাম দিমতী (রা.) তার লিখিত কিতাব “রিসালায়ে ইসবাতে কিয়াম” এর মধ্যে উল্লেখ করেছেন-

“القیام عند ذکر ولادۃ سیّد المرسلین صلّی اللہ علیہ و سلّم امر لا شکّ فی استحبا بہ واستحا بہ و ندبہ یحصل لفاعلہ من الثواب الاوفر والخیر الاکبر لانّہ تعظیم النّبی صلّی اللہ علیہ و سلّم”

অর্থাৎ, মিলাদ শরীফ পাঠকালে বা নবী করীম (সা.) এর বেলাদাত মুবারক বর্ণনাকালে হুযূর আকরাম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সম্মানার্থে দাঁড়িয়ে কিয়াম করা মুস্তাহাব, মুস্তাহসান এবং উত্তম যার কর্তা অনেক সাওয়াব বা মর্যাদার অধিকারী হয়। কেননা, কিয়াম করা মানে নবীজীকে(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সম্মান করা ।

(৮)
** দেওবন্দী,ওহাবী,তবলীগীদের নির্ভরশীল ব্যক্তি মাওলানা রফী উদ্দিন “তারিখে হেরেমাইন” কিতাবে উল্লেখ করেছেন-

“قد استحسن القیام عند ذکر ولادۃ الشریفۃ ذو روایۃ ودرایۃ فطوبی لمن کان تعظیمہ غایۃ مرامہ”

অর্থাৎ, নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর মিলাদ বা বিলাদাত শরীফ বর্ণনার মুহূর্তে কিয়াম করা ঐ সমস্ত আলেম মুস্তাহসান বা উত্তম আমল বলেছেন যারা হলেন যুগের মুহাদ্দিস ও ফকিহ্ ।

** অতএব শুভ সংবাদ বা আনন্দের ব্যপার হল ঐ সব ব্যক্তির জন্য যার মুখ্য উদ্দেশ্য হল নবীজীকে সম্মান করা । ওহাবী দেওবন্দী মৌ্লভীদের শ্রদ্ধেয় পীর হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) তার স্বীয় কিতাব “ফায়সালাহ হাফ্ত মাসাআলাহ” তে উল্লেখ করেছেন-

“میں خود قیام کرتا ہوں اور قیام میں لذت پاتا ہوں”

অর্থাৎ,মিলাদ পাঠের সময়ে আমি নিজে দাঁড়িয়ে কিয়াম করি এবং কিয়ামকালে আমি তৃপ্তি পাই

** আল্লামা মুহাম্মদ সালেহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) এর বরাতে আলা হযরত শাহ্ আহমদ রেযা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)বলেন-

“امۃ النّبی صلّی اللہ علیہ و سلّم من العرب والامصر والشام والروم والاندلس وجمیع بلاد الاسلام مجتمع ومتفق علی استجابہ واستحسانہ”

অর্থাৎ,আরব,মিসর,সিরিয়া,রোম,আন্দালুস ও সমস্ত রাষ্ট্রসমূহে নবীজীর সমস্ত উম্মত ঐক্যমত পোষণ করেছেন যে মিলাদ শরীফ পাঠে কিয়াম করা মুস্তাহাব ও মুস্তাহ্সান ।

** খাতেমুল মুহাদ্দেসীন হযরত সৈয়দ আহমদ দাহলাম মক্কী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) এর স্বীয় কিতাব “আদ্দুররাস সানিয়্যাহ্ ফির রদ্দে আলাল ওয়াহাবিয়্যার” মধ্যে উল্লেখ করেছেন-

“من تعظیمہ الفرح بلیلۃ ولادتہ وقراۃ المولود والقیام عند ذکد ولادتہ واطعام الطعام”

অর্থাৎ, নবীজীর শুভাগমন ও মিলাদ রজনীতে খুশী উদ্যাপন করা,মিলাদ শরীফ পাঠ করা,বেলাদাত শরীফের বর্ণনার মুহূর্তে কিয়াম করা তথা দাঁড়িয়ে সম্মান প্রদর্শন করা এবং মিলাদ মাহফিলে উপস্থিত জনতাকে খাবার পরিবেশন করা নবীজীর প্রতি প্রদর্শন ও তা’জিমের অন্তর্ভূক্ত ।

তারপরেও মিলাদ শরীফ ও কিয়ামের মত একটি বরকতমন্ডিত আমলকে নাজায়েয ও শরীয়ত বহির্ভূত কাজ বলা প্রকৃ্ত মুসলমানের পক্ষে শোভা পায় না ।মুনাফেক যার অন্তরে প্রিয় নবী(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রতি হিংসার আগুন জ্বলছে তার পক্ষেই সম্ভব হতে পারে ।

(৯) প্রচলিত মিলাদ মাহফিলের শরয়ী’ হুকুম: আমরা জানি আমাদের মুসলিম সমাজের যারা মিলাদ মাহফিল এর আয়োজন করে থাকেন তারা এলাকা ভেদে একেক পন্থায় এ অনুষ্ঠানটি সম্পাদন করে থাকেন। তবে মোটামুটি এ ধরণের মাহফিলে যে কাজগুলো করা হয় তা হল-(ক) পবিত্র কুরআন হতে তেলাওয়াত। (খ) দরূদ শরীফ পাঠ। (গ) তাওয়াল্লুদ তথা মহানবী (সা.) এর জন্মকালীন বিবরণ পাঠ। (ঘ) দাঁড়িয়ে সালাম প্রদান। (ঙ) কাসিদা তথা মহানবী (সা.) এর প্রশংসায় কবিতা আবৃত্তি। (চ) দোয়া ও মুনাজাত। (ছ) তাবাররুক তথা খাদ্য দ্রব্য বিতরণ ইত্যাদি। =)আমরা এখন দেখব ইসলামী শরীয়াতে এ কাজগুলো একাকী বা দলবদ্ধ হয়ে জায়েজ তথা বৈধ কি না। এ কাজগুলো যদি কেউ একত্রে একটি নিয়মতান্ত্রিক ভাবে করে তবে তা বেদয়াত তথা ইসলামের মধ্যে নব আবিস্কার এর পর্যায়ে পড়ে কি না? (ক) পবিত্র কুরআন হতে তেলাওয়াত: আমরা দেখি যে কুরআন তেলাওয়াত একাকী বা দলবদ্ধভাবে, সকলে মিলে বা একজন আবৃত্তি করবে অন্যের শুনবে- এ সবকাজগুলোই জায়েজ বা বৈধ। একাকী কুরআন তেলাওয়াত করা যে বৈধ এ বিষয়ে কারো দ্বিমত থাকতে পারে না। কেননা পবিত্র কুরআনে কুরআন তেলাওয়াত করতে বলা হয়েছে। যেমন : আল্লাহ তায়ালা বলেন, اتْلُ مَا أُوحِيَ إِلَيْكَ مِنَ الْكِتَابِ আপনার নিকট কিতাব থেকে যা অহী করা হয়েছে তা তেলাওয়াত করুন। (সূরা আনকাবুত-৪৫) আর দলবদ্ধ হয়ে কোন এক স্থানে বসে কুরআন তেলাওয়াত করা সম্পর্কে সহীহ মুসলিম এর بَاب فَضْلِ الِاجْتِمَاعِ عَلَى تِلَاوَةِ الْقُرْآنِ وَعَلَى الذِّكْرِ তথা জিকির ও কুরআন তেলাওয়াতের জন্য একত্রিত হওয়ার ফজিলত প্রসঙ্গে অধ্যায় এ বর্ণিত আছে – مَا اجْتَمَعَ قَوْمٌ فِي بَيْتٍ مِنْ بُيُوتِ اللَّهِ يَتْلُونَ كِتَابَ اللَّهِ وَيَتَدَارَسُونَهُ بَيْنَهُمْ إِلَّا نَزَلَتْ عَلَيْهِمْ السَّكِينَةُ وَغَشِيَتْهُمْ الرَّحْمَةُ وَحَفَّتْهُمْ الْمَلَائِكَةُ وَذَكَرَهُمْ اللَّهُ فِيمَنْ عِنْدَهُ যদি একদল মানুষ আল্লাহ তায়ালার কোন ঘরে একত্রিত হয়ে তার কিতাব তেলাওয়াত করে এবং পরস্পর উহার পাঠদান করে তবে তাদের উপর প্রশান্তি বর্ষিত হয়, রহমত তাদেরকে ঘিরে নেয় এবং ফেরেশতারা তাদেরকে বেষ্টনী দিয়ে রাখে আর আল্লাহ তায়ালা তার নিকট যারা আছেন তাদের মাঝে এদের আলোচনা করেন। (সহীহ মুসলিম-৪৮৬৭) এ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, কিছু মানুষ দলবদ্ধ হয়ে কোন স্থানে একত্রিত হয়ে কুরআন তেলাওয়াত করলে তা বৈধ হবে। এখন আমরা দেখব যে একজন তেলাওয়াত করবে এবং বাকী সবাই শুনবে এ ব্যাপারটি সম্পর্কে ইসলামের হুকুম কি ? আমরা দেখি পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা মহানবী (সা.) এর অন্যতম কার্য হিসেবে উম্মতের মাঝে কুরআন তেলাওয়াত করে শুনানোর কথা বলেছেন। যেমন: আল্লাহ তায়ালা বলেন, كَمَا أَرْسَلْنَا فِيكُمْ رَسُولًا مِنْكُمْ يَتْلُو عَلَيْكُمْ آَيَاتِنَا وَيُزَكِّيكُمْ وَيُعَلِّمُكُمُ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ অর্থাৎ, যেমনিভাবে আমি তোমাদের মাঝে তোমাদের মধ্য থেকে একজন রসূল পাঠিয়েছি যিনি তোমাদের সামনে আমার আয়াত তেলাওয়াত করবেন, তোমাদেরকে পবিত্র করবেন এবং তোমাদেরকে কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দিবেন। (সূরা বাকারাহ-১৫১)। অনুরম্নপ এ ব্যাপারে আমরা দেখি ইসলামী শরীয়াতের দ্বিতীয় দলীল হাদীস শরীফে বলা হয়েছে, عَنْ عَبْدِ اللَّهِ قَال قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اقْرَأْ عَلَيَّ قَالَ قُلْتُ أَقْرَأُ عَلَيْكَ وَعَلَيْكَ أُنْزِلَ قَالَ إِنِّي أَشْتَهِي أَنْ أَسْمَعَهُ مِنْ غَيْرِي قَالَ فَقَرَأْتُ النِّسَاءَ حَتَّى إِذَا بَلَغْتُ { فَكَيْفَ إِذَا جِئْنَا مِنْ كُلِّ أُمَّةٍ بِشَهِيدٍ وَجِئْنَا بِكَ عَلَى هَؤُلَاءِ شَهِيدًا } قَالَ لِي كُفَّ أَوْ أَمْسِكْ فَرَأَيْتُ عَيْنَيْهِ تَذْرِفَانِ (رواه البخاري رقم : ৪৬৬৭) হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সা. (আমাকে) বললেন, তুমি আমাকে (কুরআন) পড়ে শোনাও। আমি বললাম, আমি উহা আপনাকে পড়ে শোনাব? অথচ উহা আপনার উপর নাযিল হয়েছে। তিনি বললেন, আমি উহা অন্যের নিকট থেকে শুনতে ভালবাসি। অত:পর আমি সূরা নিসা পড়তে পড়তে এই আয়াত পর্যন্ত পৌছলাম যার অর্থ হলো “আর কেমন অবস্থা হবে যখন আমি প্রত্যেক গোষ্ঠী থেকে একজন সাক্ষী আনব এবং আপনাকে তাদের উপর সাক্ষী বানাবো?” তিনি বললেন, থাম। আমি দেখলাম তার দু’চোখ বেয়ে পানি পড়ছে। (সহীহ বুখারী-৪৬৬৭)। মোলস্না আলী কারী রহ. শামায়েল তিরমিযীর ব্যাখ্যা গ্রন্থ জমউল অসায়েল গ্রন্থে তবরানী শরীফের উদ্ধৃতি দিয়ে লিখেন যে, যখন এ কেরাত পড়া চলছিল তখন মহানবী সা. মিম্বরে বসা ছিলেন এবং তার সামনে বনী যফর গোত্রের একদল লোক উপস্থিত ছিল। (মহানবী সা. এর ক্রন্দন অধ্যায়, জমউল অসায়েল ফি শরহিশ শামায়েল লি মুল্লা আলী কারী)। এর দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, কোন স্থানে যদি কিছু লোক একত্রিত হয়ে তাদের মধ্য থেকে একজন কুরআন মাজীদ পাঠ করে এবং বাকীরা উহা শ্রবণ করে তবে এ কাজটি অবশ্যই শরীয়ত সম্মত হবে। কেননা উহা মহানবী (সা.) এর কর্ম দ্বারা প্রমাণিত। (খ) দরূদ শরীফ পাঠ: এখন আমরা দেখব যে, একাকী বা সম্মলিত হয়ে দরূদ পাঠ করা বৈধ কি না? আমরা দেখি একাকী দরূদ পাঠের বৈধতা নয় বরং উত্তমতা নিয়েও কেউ প্রশ্ন তুলে না। কেননা হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে, হযরত আনাস বিন মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত, মহানবী (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি আমার উপর একবার দরূদ পাঠ করবে আল্লাহ তা’য়ালা তার উপর দশটা রহমাত নাযিল করবেন এবং তার আমলনামা থেকে দশটা পাপ মুছে দিবেন। (সহীহ ইবনে হিব্বান-৯০৬) এ হাদীস দ্বারা স্পষ্ট প্রমাণিত হয় যে, একাকী দরূদ শরীফ পাঠ করা শুধু বৈধই নয় বরং উত্তম আমল। এখন দেখব, সম্মিলিতভাবে তথা মজলিসে মহানবী সা. এর উপর সকলে মিলে দরূদ পড়া বৈধ কি না? আমরা দেখি যে, জামে তিরমিজী শরীফে মহানবী সা. এর হাদীস বর্ণিত হয়েছে – عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ عَنْ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ مَا جَلَسَ قَوْمٌ مَجْلِسًا لَمْ يَذْكُرُوا اللَّهَ فِيهِ وَلَمْ يُصَلُّوا عَلَى نَبِيِّهِمْ إِلَّا كَانَ عَلَيْهِمْ تِرَةً فَإِنْ شَاءَ عَذَّبَهُمْ وَإِنْ شَاءَ غَفَرَ لَهُمْ .قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, মহানবী সা. বলেন, কোন গোষ্ঠী যদি কোন মজলিসে বসে এবং সেখানে আল্লাহর জিকির না করে আর নবী (সা.) এর উপরও দরূদ না পড়ে তবে উক্ত মজলিসটি তাদের জন্য (কিয়ামতের দিন) আফসোসের কারণ হবে। তিনি ইচ্ছা করলে তাদেরকে শাস্তি দিতে পারেন এবং ইচ্ছা করলে তাদেরকে মাফ করতে পারেন। ইমাম তিরমিযি (র.) বলেন, এটি হাসান সহীহ হাদীস। (জামে তিরমিযি-৩৩০২) এ হাদীস থেকে বুঝা যায় যে, যেহেতু কোন মজলিসে দরূদ না পড়া উক্ত মজলিস কিয়ামতে আফসোসের কারণ হবে, তাহলে শুধু মাত্র দরূদ পড়ার জন্যই স্বতন্ত্র মজলিস কায়েম করা অবশ্যই জায়েজ হবে। হাদীসের ইবারত দ্বারা মজলিসে দরূদ পড়া এবং ইশারা দ্বারা দরূদের মজলিস কায়েম করা জায়েজ প্রমাণিত হয়। (গ) তাওয়াল্লুদ তথা মহানবী সা. এর জন্মকালীন বিবরণ পাঠ: এবার আমরা দেখব যে, মহানবী সা. এর জন্মকালীল ঘটনা লোক সমাগমে তথা মজলিস করে আলোচনা করা যাবে কি না? এ ব্যাপারে আমরা সহীহ হাদীসে মহানবী সা. কে স্বয়ং নিজের জন্মবৃত্তান্ত আলোচনা করতে দেখি। যেমন- عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ الْحَارِثِ عَنْ الْمُطَّلِبِ بْنِ أَبِي وَدَاعَةَ قَالَ جَاءَ الْعَبَّاسُ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَكَأَنَّهُ سَمِعَ شَيْئًا فَقَامَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى الْمِنْبَرِ فَقَالَ مَنْ أَنَا فَقَالُوا أَنْتَ رَسُولُ اللَّهِ عَلَيْكَ السَّلَامُ قَالَ أَنَا مُحَمَّدُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَبْدِ الْمُطَّلِبِ إِنَّ اللَّهَ خَلَقَ الْخَلْقَ فَجَعَلَنِي فِي خَيْرِهِمْ فِرْقَةً ثُمَّ جَعَلَهُمْ فِرْقَتَيْنِ فَجَعَلَنِي فِي خَيْرِهِمْ فِرْقَةً ثُمَّ جَعَلَهُمْ قَبَائِلَ فَجَعَلَنِي فِي خَيْرِهِمْ قَبِيلَةً ثُمَّ جَعَلَهُمْ بُيُوتًا فَجَعَلَنِي فِي خَيْرِهِمْ بَيْتًا وَخَيْرِهِمْ نَسَبًا . قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ (رواه الترمذي ) হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে হারেস মুত্তালিব ইবনে আবি ওয়াদায়া থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, হযরত আব্বাস (রা.) রাসূল (সা.) এর নিকট আসলেন কেমন যেন তিনি (তার বংশ সম্পর্কে) কিছু শুনেছেন। অত:পর নবী (সা.) মিম্বরের উপর দাঁড়ালেন এবং বললেন, আমি কে? লোকেরা বলল, আপনি আল্লাহর রাসূল, আপনাকে সালাম। তিনি বললেন, আমি আব্দুল মুত্তালিবের পৌত্র আব্দুল্লাহর পুত্র মুহাম্মদ। নিশ্চয় আল্লাহ তা’য়ালা মাখলুকাত সৃষ্টি করে তাদের বিভাজন করে আমাকে উত্তম ভাগে রাখলেন, তারপর তাদেরকে দুই গ্রুপ করে আমাকে উত্তম গ্রুপে রাখলেন, অত:পর তাদেরকে বিভিন্ন গোত্রে ভাগ করে আমাকে সর্বোত্তম গোত্রে রাখলেন, তারপর তাদেরক অনেক বাড়ীতে ভাগ করে আমাকে সর্বোত্তম বাড়ী ও সর্বোত্তম বংশে রাখলেন। ইমাম আবু ঈসা তিরমিজী রহ. বলেন, এই হাদীসটি হাসান। (তিরমিজি-৩৪৫৫) এ সম্পর্কে অপর একটি হাদীসে বিষয়টি আরো পরিষ্কার করে বর্ণনা করা হয়েছে। যেমন – عن العرباض بن سارية عن رسول الله صلى الله عليه وسلم أنه قال : ” إني عند الله مكتوب : خاتم النبيين وإن آدم لمنجدل في طينته وسأخبركم بأول أمري دعوة إبراهيم وبشارة عيسى ورؤيا أمي التي رأت حين وضعتني وقد خرج لها نور أضاء لها منه قصور الشام ” . وراه في ” شرح السنة “ সাহাবী হযরত ইরবাদ ইবনে সারিয়া রা. রাসূল সা. থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি আলস্নাহর নিকট শেষ নবী হিসেবে লিখিত ছিলাম যখন আদম আ. কাদা মাটির মাঝে মিশ্রিত ছিল। আর অচিরেই আমি তোমাদেরকে আমার প্রথম অবস্থা সম্পর্কে খবর দিচ্ছি। আমি হলাম ইব্রাহিম আ. এর দোয়ার ফসল, ঈসা (আ.) এর সুসংবাদ এবং আমার মায়ের ঐ দর্শন যেটা মা দেখেছিলেন যে, তিনি আমাকে ভূমিষ্ট করছেন এমতাবস্থায় তার থেকে একটি নূর বের হলো যা তার সামনে সিরিয়ার প্রাসাদ সমূহকে আলোকিতা করেছিল। (শরহুস সুন্নাহ লিল বাগাভী, মেশকাত-৫৭৫৯) আলোচ্য হাদীসদ্বয়কে সৌদি আরবের মুহাদ্দিস আল্লামা নাসিরুদ্দীন আলবানী সহীহ বলেছেন। আলোচ্য হাদীসদ্বয় দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, মহানবী (সা.) তার জন্মের পূর্ব ইতিহাস এবং জন্মের প্রাক্কালীন কাহিনী সাহাবায়ে কেরামের সামনে বর্ণনা করতেন। যা আজ হাদীস হিসেবে আমাদের সামনে উপস্থিত। তাই বলা যায়, তাওয়াল্লুদ বর্ণনা করা তথা মহানবী সা. এবং জন্মের কাহিনী সম্পর্কিত বর্ণনা জনমজলিসে বয়ান করা জায়েজ। (ঘ) দাঁড়িয়ে সালাম প্রদান: এবার দেখা যাক মিলাদ মাহফিলের সবচেয়ে বেশি বিতর্কিত বিষয় কিয়াম সম্পর্কে ইসলামী শরীয়াত কি রায় দেয় ? আমরা দেখি এ ব্যাপারে কোন দ্বিমত নেই যে, মহানবী (সা.) কে সালাম দেয়া হবে। কেননা সালাম দেয়ার বৈধতা সম্পর্কে স্বয়ং আল কুরআন বলছে, يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا صَلُّوا عَلَيْهِ وَسَلِّمُوا تَسْلِيمًا হে ঈমানদারগণ, তোমরা নবীর উপর দরূদ পড় এবং ভক্তিভরে সালাম দাও। (সূরা আহযাব-৫৬) বুখারী শরীফের এক হাদীসে পাওয়া যায় রাসূল (সা.) বলেন – إِذَا أَتَيْتُمْ الْغَائِطَ فَلَا تَسْتَقْبِلُوا الْقِبْلَةَ وَلَا تَسْتَدْبِرُوهَا যখন তোমরা পায়খানায় যাবে তো কেবলার দিকে মুখ করবে না এবং উহার দিকে পিছনও দিবেনা। (সহীহ বুখারী-৩৮০) এ হাদীসের ব্যাখ্যাকারী সকল আলেমের মতামত হলো কা’বার তাজীমের জন্যই উহার দিকে মুখ করে বা উহার দিকে পিছন দিয়ে পেশাব বা পায়খানা করা হারাম। কেননা কাবাকে তাজীম করা ফরজ। কারণ উহা আল্লাহ তায়ালার নিদর্শন। যেমন, শাহ ওয়ালী উলস্নাহ মুহাদ্দিস দেহলভী (র.) তার লিখিল হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগা কিতাবে বলেন, إن معظم شعائر الله أربعة القرآن والكعبة والنبي والصلاة নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালার বড় নিদর্শন হলো চারটি যথা : কুরআন, কা’বা, নবী ও নামাজ। এগুলোকে সম্মান করা জরুরী। যেমন আল কুরআনে বলা হয়েছে- وَمَنْ يُعَظِّمْ شَعَائِرَ اللَّهِ فَإِنَّهَا مِنْ تَقْوَى الْقُلُوبِ আর যে ব্যক্তি আল্লাহর নিদর্শনকে সম্মান করে সেটা তার অন্তরের তাকওয়া প্রসূত।(সূরা হজ্ব-৩২) মোট কথা, কাবা শরীফকে সম্মান করার জন্যই উহার দিকে ফিরে বা পিছন দিয়ে পেশাব বা পায়খানা করা নাজায়েজ। তাই বলা যায় বুখারী শরীফের এ হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় যে, যা কিছু সম্মানিত তাকে অনুপস্থিত অবস্থায়ও সম্মান করা যায়। তথা তাজীম লিল গায়েব। আর এ কথা জানা যে, রজযা পাকের নিকট সকল মুসলমান মহানবী (সা.) কে তাজীমার্থে দাঁড়িয়ে সালাম করে থাকে। তাই বলা যায়, যদিও মহানবী (সা.) অনেক দূরে আছেন তা সত্ত্বেও তাকে সম্মানার্থে দাঁড়িয়ে সালাম দেয়া বৈধ হবে। তা ছাড়া যেখানে আল্লাহ তা’য়ালার জিকির দাঁড়ানো, বসা ও শোয়া তথা তিন অবস্থায় করা যায় তাই মহানবী (সা.) এর প্রতি সালাম ও দাঁড়িয়ে দেয়া যায়েজ হবে। (ঙ) কাসিদা তথা মহানবী (সা.) এর প্রশংসায় কবিতা আবৃত্তি: দেখা যায় প্রচলিত মিলাদ মাহফিলে সালামের সময় একজন মহানবী (সা.) এর প্রশংসামূলক কাসীদা পাঠ করে থাকে। এ ব্যাপারে আমরা দেখি বুখারী শরীফের হাদীস। যেখানে দেখা যায় মহানবী সা. এর উপস্থিতিতে সাহাবায়ে কেরামের মজলিসে হযরত হাসসান বিন সাবেত (রা.) মহানবী (সা.) এর প্রশংসামূলক কবিতা আবৃত্তি করতেন। যেমন- عن عائشة قالت : كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يضع لحسان منبرا في المسجد يقوم عليه قائما يفاخر عن رسول الله صلى الله عليه وسلم أوينافح . ويقول رسول الله صلى الله عليه وسلم : ” إن الله يؤيد حسان بروح القدس ما نافح أو فاخر عن رسول الله صلى الله عليه وسلم ” . رواه البخاري হযরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন : রাসূল (সা.) হাসসান বিন সাবেতের জন্য মসজিদে নববীতে একটি মিম্বর স্থাপন করে দিয়েছিলেন। যার উপর সে দাড়িয়ে রাসূল সা. এর প্রশংসামূলক কবিতা বলত। আর রাসূল (সা.) বলতেন সে যতক্ষণ আল্লাহর রাসূলের পক্ষ থেকে ফখর করতে থাকবে ততক্ষণ আল্লাহ তা’য়ালা তাকে জিবরাইল আমীনের মাধ্যমে সাহায্য করবেন। (বুখারী শরীফ, মেশকাত-৪৮০৫) অতএব প্রমাণিত হলো যে, দলবদ্ধ হয়ে নবীর প্রশংসামূলক কবিতা বা কাসীদা আবৃত্তি করা শরীয়াতে অবৈধ নয় বরং বৈধ ও উত্তম। (চ) দোয়া ও মুনাজাত: প্রচলিত মিলাদ মাহফিলে আমরা আর যে কাজটি দেখি তা হলো হাত তুলে সম্মিলিত মুনাজাত। এ ব্যাপারেও আমরা দেখি যে, যে কোন সময় দুয়া করা যায় এবং দুয়া করলে আল্লাহ তায়ালা খুশি হন। পবিত্র কুরআনে আছে- وَقَالَ رَبُّكُمُ ادْعُونِي أَسْتَجِبْ لَكُمْ আর তোমাদের প্রতিপালক বলেন তোমরা আমার নিকট দোয়া করব আমি তোমাদের দুয়া কবুল করব। হাদীস শরীফে আছে- قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ لَمْ يَسْأَلْ اللَّهَ يَغْضَبْ عَلَيْهِ রাসূল (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ তায়ালার নিকট না চায় আল্লাহ তায়ালা তার উপর রাগান্বিত হন। (জামে তিরমিযি-৩২৯৫) তাই আল্লাহ তায়ালার নিকট চাইতে হবে। আর চাওয়ার আদব হলো হাত তুলো দুয়া করা। যেমন বর্ণিত আছে – عنْ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا دَعَوْتَ اللَّهَ فَادْعُ بِبُطُونِ كَفَّيْكَ وَلَا تَدْعُ بِظُهُورِهِمَا فَإِذَا فَرَغْتَ فَامْسَحْ بِهِمَا وَجْهَكَ . হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল সা. বলেন : যখন তুমি আল্লাহর নিকট দুয়া করবে তখন তোমার হাতের তালুর পেট দ্বারা দোয়া কর এবং হাতের পিঠ দ্বারা নয়। অত:পর যখন শেষ হয় দু’হাত মুখে মাসেহ কর। (সুনানে ইবনে মাজাহ-৩৮৫৬) অন্য হাদীসে আছে, عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ الْمَسْأَلَةُ أَنْ تَرْفَعَ يَدَيْكَ حَذْوَ مَنْكِبَيْكَ হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, চাওয়ার আদব হলো তোমার দু’হাত কাধ বরাবর উত্তোলন করবে। (সুনানে আবি দাউদ-১২৭৪) আবার আরেক হাদীসে পাওয়া যায় -عن حبيب بن مسلمة الفهري وكان مستجابا أنه أمر على جيش فدرب الدروب ، فلما لقي العدو قال للناس : سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول : ” لا يجتمع ملأ فيدعو بعضهم ويؤمن سائرهم إلا أجابهم الله ” হযরত হাবীব ইবনে মাসলামাহ আল ফিহরী (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি ছিলেন মুস্ত্মাজাবুদ দাওয়াত। তিনি এক যুদ্ধে যুদ্ধে দামামা বাজলে সৈন্যদেরকে নির্দেশ দিলেন। যখন শত্রুর সাথে সাক্ষাত হলো তিনি লোকদেরকে বললেন, আমি রাসূল সা. কে বলতে শুনেছি: ”যদি কোন একদল লোক একত্রিত হয় অত:পর একজন দোয়া করে এবং বাকীরা আমীন আমীন বলে তবে তা আল্লাহ তায়ালা তাড়াতাড়ি কবুল করেন। (আল মুজামুল কাবীর লিততবারানী-৩৪৫৩) মিলাদ মাহফিলের সম্মিলিত মুনাজাত অবশ্যই শরীয়াত সম্মত ও একটি উত্তম কাজ হিসেবে প্রমাণিত। (ছ) তাবাররুক তথা খাদ্য দ্রব্য বিতরণ: প্রচলিত মিলাদ মাহফিলে দেখা যায় যে, সর্বশেষ কাজ তথা মুনাজাতের পর যা করা হয় তা হলো, মিষ্টি জাতীয় বা কোন খাবার উপস্থিত লোকদের মাঝে বিতরণ করা। এ কাজটি নি:সন্দেহে জায়েজ। কেননা, অন্ন দান করা বড়ই ছওয়াবে কাজ। হাদীসে আছে- عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا أَنَّ رَجُلًا سَأَلَ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَيُّ الْإِسْلَامِ خَيْرٌ قَالَ تُطْعِمُ الطَّعَامَ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি নবী সা. কে জিজ্ঞেস করল ইসলামের কোন আমল সর্বোত্তম? তিনি বললেন, (অন্যকে) খাবার খাওয়ানো। (সহীহ বুখারী-১১) তাই বলা যায়, মিলাদ মাহফিলে যে খাবার খাওয়ানো হয় তা এই হাদীসের সাধারণ হুকুমের আওতাভূক্ত হয়ে যায়েজ হবে। এতে কোন সন্দেহ নেই। এতক্ষণ আমাদের আলোচনা দ্বারা বুঝা গেল যে, প্রচলিত মিলাদ মাহফিলের প্রত্যেকটি কাজ আলাদাভাবে একক বা জামাতে করা উভয় জায়েজ বরং উত্তম ও ছওয়াবের কাজ। এখন কথা হলো একাজ গুলো একত্রে করার কারণে কি উহা বিদয়াত বলে গণ্য হবে? কোন ব্যক্তি যদি অনেকগুলো জায়েজ কাজ একত্রে করে তবে কি উহা হারাম ও বিদয়াত হবে? যেমন যদি কোন ব্যক্তির নিয়মিত আমল যদি এমন হয় যে, সে প্রতিদিন ফজরের নামাজ পড়ে কিছু সময় জিকির আজকার করে, অত:পর কিছু সময় দরূদ শরীফ পড়ে। তারপর বেলা ঠিকমতো উঠে গেলে এশরাকের নামাজ আদায় করে মসজিদ থেকে বের হয় এবং এলাকার অসহায় মানুষের খোজ খবর নিয়ে বাসায় ফিরে যায়? এ লোকটি প্রতিদিন এরকম আমল করে এবং কখনো ছেড়ে দেয় না। তবে কি আমরা এ লোকটিকে বিদয়াতী বলবো? কারণ এ কাজগুলো এভাবে একত্রে কোন একটি হাদীস বা কোন একটি আয়াত দ্বারা প্রমাণিত নয় এমনকি কোন সাহাবার জীবনীতেও এরূপ আমলের বর্ণনা পাওয়া যায় না। কশ্মিণকালেও এ লোক বিদয়াতী নয় বরং সে একজন নেককার ও সালেহ ব্যক্তি। তদ্রম্নপভাবে, অনেকগুলো জায়েজ বা উত্তম কাজকে একত্রে করার কারণে প্রচলিত মিলাদ মাহফিল নিষিদ্ধ বিদয়াতের অন্ত্মর্ভূক্ত হবে না। জিজ্ঞেস করি, এ অনুষ্ঠানকে বিদয়াত হতে ঠেকানোর জন্য কি বর্ণিত দলীল গুলো যথেষ্ট নয়? কোন মাসয়ালার দলীল থাকার পরেও কি উহা বিদয়াত হবে? বিদয়াত প্রসঙ্গে ইমাম শাফেয়ী রহ. বলেন : قال الشافعي: المحدثات من الأمور ضربان: أحدهما: ما أحدث يخالف كتاباً، أو سنة، أو أثراً، أو إجماعاً. فهذه البدعة الضلالة. والثانية: ما أحدث من الخير لا خلاف فيه لواحد من هذا، وهذه محدثة غير مذمومة. নতুন আবিস্কৃত বিষয় দুই প্রকার। এক. যে সকল নতুন বিষয় কুরআন, সুন্নাহ, আছারম্নছ ছাহাবা অথবা ইজমার বিরোধিকা করে সেটা বিদয়াতে দলালাহ। দুই. আর যে সকল ভাল কাজ নতুন সৃষ্ট যার সাথে এ দলীলগুলোর কোন সংঘর্ষ নাই সেটা নিন্দনীয় নয়। এজন্য দেখা যায়, প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন হযরত জালালুদ্দীন সুয়ূতী (র.) তার বিখ্যাত ফতোয়ার কিতাব الحاوي للفتاوى (আল হাভী লিল ফতোয়া) এর মধ্যে বলেছেন, عندي أن أصل عمل المولد الذي هو اجتماع الناس وقراءة ما تيسر من القرآن ورواية الأخبار الواردة في مبدأ أمر النبي صلى الله عليه وسلم وما وقع في مولده من الآيات ثم يمد لهم سماط يأكلونه وينصرفون من غير زيادة على ذلك هو من البدع <ص الحسنة التي يثاب عليها صاحبها لما فيه من تعظيم قدر النبي صلى الله عليه وسلم وإظهار الفرح والاستبشار بمولده الشريف، আমার মতে, মিলাদ মাহফিলের মৌলিক কাজ তথা মানুষের একত্রিত হওয়া, কিছু কুরআন তেলাওয়াত করা, মহানবী (সা.) এর সূচনা নিয়ে বর্ণিত হাদীসগুলো এবং তার জন্মের সময় যে সকল নিদর্শন বর্ণনা করা অত:পর খাদ্য বিতরণ করা এবং আর কিছু না করে ফিরে যাওয়া ইত্যাদি হলো বিদয়াতে হাসানাহ যা করলে ছাওয়াব পাওয়া যাবে কেননা মিলাদ শরীফের মাধ্যমে আনন্দ ফূর্তি প্রকাশের দিকটি মহানবী সা. কে তাজীম করার শামিল। (আল হাভী লিল ফতোয়া, ১ম খন্ড-২৭২ ) পরিশেষে আমরা বলব, প্রচলিত মিলাদ মাহফিল নিন্দনীয় নয়। বরং এর মাধ্যমে একজন ব্যক্তি মহানবী (সা.) এর প্রতি তার ভালবাসা বৃদ্ধি করতে পারে। অধিক পরিমাণে দরূদ পড়ার মাধ্যমে বিশেষ ছাওয়াবের ভাগীদার হতে পারে। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে ভালকাজের তাওফীক দান করুন। আমীন।

(১০)
দাঁড়িয়ে সালাম প্রদান বা কিয়াম সম্পর্কে ইসলামী শরীয়াত কি রায় দেয়: আমরা দেখি এ ব্যাপারে কোন দ্বিমত নেই যে, মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে সালাম দেয়া হবে। কেননা সালাম দেয়ার বৈধতা সম্পর্কে স্বয়ং আল কুরআন বলছে, يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا صَلُّوا عَلَيْهِ وَسَلِّمُوا تَسْلِيمًا হে ঈমানদারগণ, তোমরা নবীর উপর দরূদ পড় এবং ভক্তিভরে সালাম দাও। (সূরা আহযাব-৫৬) বুখারী শরীফের এক হাদীসে পাওয়া যায় রাসূল (সা.) বলেন – إِذَا أَتَيْتُمْ الْغَائِطَ فَلَا تَسْتَقْبِلُوا الْقِبْلَةَ وَلَا تَسْتَدْبِرُوهَا যখন তোমরা পায়খানায় যাবে তো কেবলার দিকে মুখ করবে না এবং উহার দিকে পিছনও দিবেনা। (সহীহ বুখারী-৩৮০) এ হাদীসের ব্যাখ্যাকারী সকল আলেমের মতামত হলো কা’বার তাজীমের জন্যই উহার দিকে মুখ করে বা উহার দিকে পিছন দিয়ে পেশাব বা পায়খানা করা হারাম। কেননা কাবাকে তাজীম করা ফরজ। কারণ উহা আল্লাহ তায়ালার নিদর্শন। যেমন, শাহ ওয়ালী উলস্নাহ মুহাদ্দিস দেহলভী (র.) তার লিখিল হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগা কিতাবে বলেন, إن معظم شعائر الله أربعة القرآن والكعبة والنبي والصلاة নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালার বড় নিদর্শন হলো চারটি যথা : কুরআন, কা’বা, নবী ও নামাজ। এগুলোকে সম্মান করা জরুরী। যেমন আল কুরআনে বলা হয়েছে- وَمَنْ يُعَظِّمْ شَعَائِرَ اللَّهِ فَإِنَّهَا مِنْ تَقْوَى الْقُلُوبِ আর যে ব্যক্তি আল্লাহর নিদর্শনকে সম্মান করে সেটা তার অন্তরের তাকওয়া প্রসূত।(সূরা হজ্ব-৩২) মোট কথা, কাবা শরীফকে সম্মান করার জন্যই উহার দিকে ফিরে বা পিছন দিয়ে পেশাব বা পায়খানা করা নাজায়েজ। তাই বলা যায় বুখারী শরীফের এ হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় যে, যা কিছু সম্মানিত তাকে অনুপস্থিত অবস্থায়ও সম্মান করা যায়। তথা তাজীম লিল গায়েব। আর এ কথা জানা যে, রজযা পাকের নিকট সকল মুসলমান মহানবী (সা.) কে তাজীমার্থে দাঁড়িয়ে সালাম করে থাকে। তাই বলা যায়, যদিও মহানবী (সা.) অনেক দূরে আছেন তা সত্ত্বেও তাকে সম্মানার্থে দাঁড়িয়ে সালাম দেয়া বৈধ হবে। তা ছাড়া যেখানে আল্লাহ তা’য়ালার জিকির দাঁড়ানো, বসা ও শোয়া তথা তিন অবস্থায় করা যায় তাই মহানবী (সা.) এর প্রতি সালাম ও দাঁড়িয়ে দেয়া যায়েজ হবে।

Author: bashirmahmudellias

I am an Author, Design specialist, Islamic researcher, Homeopathic consultant.

Leave a comment