Dr. Bashir Mahmud Ellias's Blog

Know Thyself


2 Comments

সোনার পাহাড় ভারত ইরান এবং আখেরী জা মানা আল্লামা ইমরান নযর হোসেন

সোনার পাহাড়, ভারত, ইরান এবং আখেরী জামানা
আজ রাতে আমাদের আলোচ্য বিষয় একটি অতীব আশ্চর্যজনক বিষয়, বিস্ময়কর এবং কল্পনা উজ্জীবিতকারী বিষয় , বিশ্বনবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) এর ভবিষ্যতবাণী বিশেষত আখেরী জামানা বা পৃথিবীর অন্তিম সময়কাল সম্পর্কে। আলোচনা সভা সমাপ্তির পরেও আমরা যাহা নিয়া গভীরভাবে চিন্তা-ফিকির করিতেই থাকিব । আমাদের আজকের আলোচ্য বিষয় রিভার ইফ্রেটিস বা আরবীতে ফোরাত নদী, স্বর্ণের পাহাড়, ইন্ডিয়া, ইরান এবং আখেরী জামানা । প্রথমে আমরা শুরু করিতে চাই নবী করীম (সাঃ) এর সেই বিখ্যাত হাদীসের প্রতি ইশারা করিয়া যাহাতে তিনি কেয়ামতের দশটি প্রধান আলামতের বর্ণনা করিয়াছেন । এখন যাহাদেরকে প্রধান / বড় আলামত হিসাবে অভিহিত করা হয় । অবশ্য হাদীসে প্রধান শব্দটি ব্যবহার করা হয় নাই । এই দশটির মধ্যে একটি হইল মাসীহ দাজ্জাল বা ভন্ড মাসীহ । আল্লাহ যাহাকে সৃষ্টি করিয়াছেন, যাহাকে বিশেষ কলাকৌশল বা কার্যক্রম সম্পাদনের যোগ্যতা দেওয়া হইয়াছে । কিন্তু সে হইল শয়তান বা একটি অশুভ সৃষ্টি । তাহাকে যখন দুনিয়াতে মুক্তি দেওয়া হইবে, আমরা তাহাকে দেখিতে পাইব একজন মানুষ হিসাবে । সে হইবে একজন ইহুদী যুবক, হৃষ্টপুষ্ট যুবক, (দুই কানের নিকটে) কোকড়ানো চুল থাকিবে । তাহার ভূমিকা হইবে হযরত ঈশা (আঃ)-এর ভূমিকায় অভিনয় করা (যিনি হইবেন
gold%2B%2Bend657.jpg
সারা দুনিয়ার একচ্ছত্র শাসক) । যেহেতু আমরা জানি যে, হযরত ঈশা ইবনে মারিয়াম (আঃ) আবার পৃথিবীতে ফিরিয়া আসিতেছেন, পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ট কন্ঠস্বর মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) সেই ভবিষ্যতবাণী করিয়া গিয়াছেন । আমরা বোখারী শরীফের হাদীস হইতে জানিতে পারিয়াছি যে, তিনি অর্থাৎ যীশু খ্রীষ্ট অর্থাৎ হযরত ঈশা (আঃ) হইবেন সমগ্র পৃথিবীর শাসক এবং ন্যায়বিচারক । স্বাভাবিকভাবেই তিনি হইবেন পৃথিবীর সর্বোময় ক্ষমতার অধিকারী, তাঁহার ক্ষমতাকে প্রতিহত করিবার মতো শক্তি কাহারো থাকিবে না । কাজেই তিনি হইবেন পৃথিবীর শাসক শক্তি । সুতরাং দাজ্জাল বা ভন্ড মাসিহ যদি হযরত ঈশা (আঃ)-এর চরিত্রে সার্থকভাবে অভিনয় করিতে চায়, তাহা হইলে তাহাকে পৃথিবীর একচ্ছত্র শাসক হওয়ার চেষ্টা করিতে হইবে । অতএব তাহাকে জেরুজালেম হইতে পৃথিবী শাসন করিতে হইবে এবং ইহুদীদেরকে বুঝাতে হইবে যে, সে সত্যিকারের মাসীহ । মুসলমানদের নয়, হিন্দুদের নয়, খ্রিষ্টানদের নয় বরং ইহুদীদের বিশ্বাস করাইতে হইবে যে সে সত্যিকারের মাসিহ । এই সামান্য বিষয়টি বুঝা কি এতই কঠিন ? আমার কাছে আপনাদের জন্য একটি খবর আছে আর তাহা হইল দাজ্জালের জেরুজালেম হইতে পৃথিবী শাসন করিবার সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হইয়া গিয়াছে, মাত্র সামান্যই বাকী আছে । পবিত্র কোরআনে জেরুজালেম নামক আমার বইটি যাহা তের বছর আগে ছাপা হইয়াছিল, তাহা এখন বাহাসা অর্থাৎ ইন্দোনেশিয়ার ভাষায় অনুবাদ পাওয়া যাইতেছে । আপনাদের জন্য আরেকটি সুসংবাদ আছে, তাহলো ইন্ডিয়ান মসজিদের একজন ইমাম সাহেব অনুবাদ করিতেছেন । খুব শীঘ্রই তাহা তামিল ভাষায় পাওয়া যাইবে। এই বইটিতে তাহা বিস্তারিত ব্যাখ্যা করা হইয়াছে । আজ রাতে আমাদের আলোচনার বিষয় হইল দাজ্জালের কলাকৌশল, সে কি কি কর্মপন্থা প্রয়োগ করে । কেননা রাসুলে করীম (সাঃ) বলিয়াছেন, দাজ্জালের ফিতনা বিপর্যয় হইবে মানবজাতির ইতিহাসে সবচাইতে ভয়াবহ যাহা মানুষ হযরত আদম (আঃ) হইতে কেয়ামত পর্যন্ত প্রত্যক্ষ করিয়াছে । কাজেই ইসলামী চিন্তাবিদদেরকে পৃথিবীবাসীদেরকে অবশ্যই জানাইতে হইবে দাজ্জালের ফিতনাহ বিপর্যয় কি জিনিস এবং সে জেরুজালেম হইতে পৃথিবী শাসন করিবার জন্য কি কি কলাকৌশল অবলম্বন করে ।

যাহাতে সে ঘোষণা করিতে পারে যে, আমিই সত্যিকারের ম্যাসাইয়া । যাহাতে ইহুদীরা তাহাকে প্রতিশ্রুত মাসীহ রূপে বিশ্বাস করে । তারপর আমরা অবশ্যই বিশ্বাস করি যে, তখন আল্লাহ তায়ালা হযরত ঈশা মাসীহ (আঃ)-কে আসমান হইতে প্রেরন করিবেন এবং তিনি দাজ্জালকে হত্যা করিবেন । আর এখানেই দাজ্জালের মামলা খতম হইয়া যাইবে । সুতরাং এভাবেই গতানুগতিকভাবে মিথ্যার উপরে সত্যের জয় এবং জুলুমের ওপরে ন্যায়বিচারের বিজয় সংঘঠিত হইবে । কাজেই আমাদের আজকের আলোচনা দাজ্জাল কি কি অপকৌশল অবলম্বন করে মানবজাতিকে শাসন করিবে । আর এই প্রেক্ষাপটেই আমরা এই হাদীসটি নিয়ে সর্বপ্রথম আলোচনা করিব । আমি অতীতে অনেকবার এই হাদীসটি আলোচনা প্রসঙ্গে উল্লেখ করিয়াছি কিন্তু আজকে প্রথমবারের মতো আলোচনা করিব বিস্তারিতভাবে । আসুন প্রথমে আমরা মহামহিম আল্লাহর নাম স্মরণ করিয়া শুরু করি যাহাতে তিনি আমাদেরকে ভুলত্রুটি হইতে রক্ষা করেন । একটি কথা পুণরায় বলিতে চাই যে, যখনই আপনাদের ভাই ইমরান হোসেন কোন ব্যাপারে মতামত দেন অথবা কোরআন-হাদীসের ব্যাখ্যা করেন, আমি চাই আপনারা তাহা গ্রহন করিবেন না , কখনও না। আপনারা কেবল তখনই আমার মতামত গ্রহন করিবেন, যখন আপনাদের মনে হয় যে ইহা সঠিক। ইহার বেশী আমি কি করিতে পারি ? আমি কি মানুষের মগজ ধোলাই করিতেছি ? তাই নাকি ? আমি আমার মতামত দেওয়ার পরে বলি “আল্লাহই ভাল জানেন” । গত চৌদ্দশ বছর যাবত ইসলামী চিন্তাবিদগণ এই কথাই বলিয়া আসিতেছেন । তাহারা কোন ব্যাপারে মতামত দিয়া বলিতেন “আল্লাহই ভালো জানেন”। আমিও তাহাই করিতেছি । আপনারা কি আমাকে অস্বীকার করিবেন ? আল্লাহর রাসুল (সাঃ) বলিয়াছেন, দাজ্জাল তাহার হাতে রুটির পাহাড় নিয়া আগমণ করিবে এবং লোকেরা রুটির জন্য তাহার পেছনে পেছনে ছুটিবে । এখানেই আমাদের চিন্তাভাবনা পদ্ধতির সমস্যা । সালাফীরা আমার ভাই, আমি তাহাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করিবার জন্য আসি নাই । ইহা হইল জ্ঞান । এখানে আমাদেরকে অবশ্যই যুক্তিবাদী হইতে হইবে । আমরা তাহাদেরকে বলিতে চাই, আপনারা যদি আপনাদের পদ্ধতি নিয়া পড়িয়া থাকেন, আপনারা যদি মনে করেন যে, আল্লাহ এবং আল্লাহর রাসুল (সাঃ) ছাড়া আর কাহারো কোরআন-হাদীস ব্যাখ্যা করিবার অধিকার নাই আর তাহারা যদি ব্যাখ্যা করিয়া না যান, তাহলে আমাদেরকে এক নাম্বারে অপেক্ষা করিতে হইবে একটি “পাহাড়” এর জন্য এবং দ্বিতীয়ত সেই পাহাড়টি হইতে হইবে “রুটির” । তাছাড়া সেই রুটিগুলি ভালো আটার হইবে নাকি পোঁকা ধরা পচাঁ আটার হইবে তাহাও ভাবনার বিষয় । আমার শ্রোতাগণ ইতিমধ্যেই হাসিয়া দিয়াছেন, তাহারা বিষয়টির প্রকৃত রহস্য বুঝিতে পারিয়াছেন নিশ্চয় । ইহা কি আসলেই আমরা যে হালুয়া-রুটি খাই সেই রুটি ? নাহ ! আমরা এই পদ্ধতি ব্যবহার করি না । আমরা মনে করি, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) যখন “রুটির পাহাড়” বলিয়াছেন, তাহা দ্বারা তিনি রুটি স্তুপাকারে সাজিয়ে পাহাড়ের মতো উঁচু করাকে বুঝান নাই । আমরা বিষয়টিকে দেখি ভিন্ন দৃষ্টিতে । আমরা মনে করি নবী করিম (সাঃ) রুটির পাহাড় দিয়ে বুঝিয়েছেন বিশাল বিপুল ধন-সম্পদের ভান্ডার । রুটি দিয়া এখানে বুঝানো হইয়াছে বস্তুগত ধন-সম্পদ । আপনি যদি আমাদের সাথে ভিন্ন মত পোষণ করেন সেটা আপনার সমস্যা । কারণ আমরা ক্রমেই সম্মুখপানে ধাবিত হইতেছি । সালাফী আলেমদের জন্য ইহাই আমাদের উপদেশ । আমরা ক্রমাগত সামনের দিকে অগ্রসর হইতেছি, মাশায়াল্লাহ গত কয়েক মাসে আমরা অনেক দূর অগ্রসর হইয়াছি । আলহামদুলিল্লাহ ! আমরা যতটা উন্নতি করিয়াছি সেজন্য প্রশংসা পাইতেছি । সুতরাং দাজ্জাল অনেক ধন-সম্পদ সঞ্চয় করিবে, বিপুল ধন-সম্পদের মালিক হইবে । যাহারা তাহার ধন-সম্পদের লোভে তাহার পেছনে ছুটিবে আল্লাহ এবং আল্লাহর রাসুলের (সাঃ) প্রতি তাহাদের আনুগত্য ভুলিয়া, আপনিও ধন-সম্পদের মাধ্যমে তাহাদের কিনিতে পারিবেন । দাজ্জাল কি কি কলাকৌশলে এই বিপুল সম্পদের মালিক হইবে এবং পৃথিবী শাসন করিবার তাহার মিশন বাস্তবায়ন করিবে, কেননা ধন-সম্পদই হইল শক্তি ক্ষমতা । কাজেই আমার যদি সম্পদ থাকে, আমি সকলকে শাসন করিব । তাছাড়া যাদের সম্পদ নাই, তাহাদেরকে সহজেই দাসত্বের বন্দনে আবদ্ধ করা যায় ।

কাজেই যাহাদেরকে ক্রীতদাসে পরিণত করা যায়, তাহারা আমার শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়িয়া তুলিতে পারিবে না । সুতরাং কোন সেই কলাকৌশল যাহার মাধ্যমে দাজ্জাল এই বিপুল সম্পদের মালিক হইবে ? আমরা সবাই জানি সুদের কথা । ঋণদানকারীরা যখন আপনাকে ঋণ দেয়, তাহা সব সময় নিজে ধনী হওয়ার জন্য দেয় না । আপনারা কি জন পারকিন্স এর বই “কনফেশান অফ এন ইকোনোমিক হিটম্যান” পড়িয়াছেন ? আল্লাহকে ধন্যবাদ যে তিনি বইটি লিখিয়াছেন । কেননা আমি লিখিলে তাহা মানুষ বিশ্বাস করিত না কিন্তু এখন আর অবিশ্বাসের উপায় নাই । বইটি সংগ্রহ করার এবং পড়িবার চেষ্টা করুন । তাহলে আপনারা বুঝিতে পারিবেন যে, ঋণদাতারা অনেক সময় আপনাকে সুদে ঋণ দেয়, যাহাতে তাহারা আপনাকে দাসত্বে আবদ্ধ করিতে পারে । কাজেই বিশ্ব ব্যাংক বা আইএমফ বলেন কিংবা অন্যান্য সুদভিত্তিক বাণিজ্যিক ব্যাংক বলেন সকলের একই কাজ । এমনকি দুঃখজনকভাবে এখনকার ইসলামী ব্যাংকগুলি, তথাকথিত ইসলামী ব্যাংকগুলিও একই কাজে অর্থাৎ সমগ্র বিশ্বের সাধারণ মানুষকে দাসত্বে বন্দি করিবার দাজ্জালের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ভূমিকা রাখিয়াছিল এবং এখনও রাখিতেছে । কিন্তু আমাদের আজ রাতের আলোচ্য বিষয় ইহা নয় । আমাদের আলোচ্য বিষয় হইল ফোরাত নদী এবং সোনার পাহাড় । সেই কাজ শুরু করিবার পূর্বে আপনাদেরকে জানাতে চাই যে, আপনাদের ভাই ইমরান ১৯৭১ সালে আলিমিয়া ইনিস্টিটিউট অব ইসলামিক স্টাডিজ, করাচী, পাকিস্তান থেকে স্নাতক ডিগ্রী লাভ করে । আমার শিক্ষক এবং ইনিষ্টিটিউটের প্রিন্সিপাল ছিলেন মাওলানা ডঃ ফজলূর রহমান আনসারী (রহঃ) । আমি ইসলামিক স্টাডিজে গ্রাজুয়েশান এবং করাচী ইউনিভার্সিটি থেকে ফিলোসফীতে পোষ্ট গ্রাজুয়েশান করে পাকিস্তান ত্যাগ করিবার সময় আমার ওস্তাদ মাওলানা ফজলূর রহমান আনসারী বলিলেন, ইমরান ! আমি আমার দেশে ফিরিয়া যাইতে চাই এবং আমার হাতকে চিৎ করিয়া রাখিবার পরিবর্তে উপুড় করিয়া রাখিতে চাই অর্থাৎ এখন থেকে অন্যের দানদখ্যিনায় চলিবার পরিবর্তে নিজের জীবিকা নিজেই উপার্জন করিতে চাই । কেননা তিনি বর্তমান মুসলিম জাতি চরিত্র বুঝিতে পারিয়াছিলেন । সুতরাং আমিও দেশে ফিরিয়া পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ে চাকরির ইন্টারভিউ দিলাম । তাহারা বলিলেন, আপনাকে আমরা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাইতে আগ্রহী, তবে আমরা চাই আপনি আবারও ইউনির্ভাসিটিতে ফিরিয়া যান এবং ইন্টারন্যাশান্যাল রিলেশানের উপর একটি ডিপ্লোমা করিয়া আসুন । হ্যাঁ, আমি ইন্টারন্যাশনাল মনিটরী ইকোনোমিক্সে অধ্যয়নের সুযোগ পাইয়া যাই । আমি ক্লাশে যাইতাম সাথে কোরআন শরীফ নিয়া অবশ্যই আমার অন্তরের ভিতরে । আমার সহপাঠিরা ছিল সবাই লন্ডন ইউনির্ভাসিটি, ফ্রেন্স ইউনির্ভাসিটি, ক্যানাডিয়ান ইউনির্ভাসিটি থেকে ইকোনোমিক্সে মাস্টার্স ডিগ্রীধারী । তাহারা আমাকে নিয়া হাসাহাসি করিত, এই বেচারা পাকিস্তানী ডিগ্রীধারী তাও আবার ইসলামিক স্টাডিজে, সে ইকোনোমিক্সের কি বুঝিবে ? কিন্তু ফার্স্ট ইয়ার ফাইনাল পরীক্ষায় আমি প্রথম স্থান অধিকার করিয়া তাহাদের হাসি বন্ধ করিয়া দেই । ফাইনাল পরীক্ষায় আমি তাহার চাইতেও বেশী নাম্বার পাইয়াছিলাম যে লন্ডন স্কুল অব ইকোনোমিক্স থেকে মাস্টার্স ডিগ্রীধারী ছিল । ইহা কোন মেধার ব্যাপার ছিল না, ইহা কোন কঠোর পরিশ্রমের ব্যাপার ছিল, ইহা ছিল তাহার চাইতেও বেশী কিছু । ইহা ছিল কোরআন, কেননা আমি এখানে ভর্তি হওয়ার পূর্বে কোরআন অধ্যয়ন করিয়াছিলাম । কিন্তু ইহা ছিল ১৯৭২ সালের কথা, চল্লিশ বছর পূর্বে । চল্লিশ বছর পূর্বে আমি যাহা অধ্যয়ন করিয়াছিলাম, তাহা বর্তমানে বুঝিতে পারিতেছি । তখন আমি যাহা অধ্যয়ন করিয়াছিলাম, ফলে এখন সেই হাদীসটি বুঝিতে পারিতেছি, ফোরাত নদী সোনার পাহাড় বাহির করিয়া দিবে । আমি যদি ব্রেটনউড একর্ড না পড়িতাম, আমি যদি আন্তর্জাতিক মুদ্রা অর্থনীতি না পড়িতাম, আমি যদি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) চুক্তির ধারা-উপধারা না পড়িতাম, আমি যদি গত চল্লিশ বছর যাবত ইন্টারন্যাশান্যাল মনিটরী ইকোনোমিক্স না পড়িতাম, সর্বোপরি আমি যদি কোরআন না পড়িতাম, তবে আজও ফোরাত নদী এবং সোনার পাহাড় সংক্রান্ত হাদীসের মর্ম বুঝিতে পারিতাম না । সত্যিকার অর্থেই বুঝিতে অক্ষম হইতাম । এই হাদীসের অর্থ বুঝিতাম না যতক্ষন না কাঙ্খিত ঘটনা সংঘটিত হইত এবং ভারত ঘোষণা করে যে, যখন আমেরিকা ইরানের তেল বিক্রির উপর অবরোধ আরোপ করে, ব্যাংকিং সিষ্টেম । তারপর ইউরোপীয় ইউনিয়নও আমেরিকার সাথে অবরোধে যোগ দেয় । তখন ইন্ডিয়া ঘোষনা করে যাহা আমার জন্য ছিল খুবই বিব্রতকর, হিন্দু ইন্ডিয়া তাহা করিয়া দেখাইল যাহা এমনকি দুনিয়ার কোন মুসলিম সরকারও করিতে সক্ষম হয় নাই । আমরা আবার এইসব লোকদেরকেই আমাদের নেতা মনে করি এবং নির্বাচনে ভোট দেওয়ার জন্য ভোট কেন্দ্রে যাই ! ভারত ঘোষণা করে তাহারা আমেরিকান অবরোধ এবং যায়োনিষ্ট ইউরোপিয়ান অবরোধ বাইপাস করে ইরানী তেল ক্রয় করিবে সোনার বিনিময়ে এবং ইরানও ভারতের নিকট তেল বিক্রয়ে রাজী হয় সোনার বিনিময়ে ।
রাশিয়া এবং চীনও দ্রুত তাহাদের অনুসরন করে । কাজেই তাহারা যাহা করিয়াছে, তাহাতে বর্তমানে আমরা দেখিতে যাইতেছি যাহাকে বলে পেট্টোডলারের মৃত্যু । ইতিপূর্বে আমি কখনও দাজ্জালের কর্মকৌশল বুঝিতে সক্ষম হই নাই । ইরানের কেন তাহাদের ইসলামী বিপ্লবের পরে এতোগুলো বছর লাগিলো এই সামান্য বিষয়টি বুঝিতে যে সোনাই হইল আসল মুদ্রা ? ইসলামিক প্রজাতন্ত্র ইরানকে নিয়ে শিয়ারা অনেক গৌরব করিয়া থাকে । পাকিস্তানও একটি ইসলামী প্রজাতন্ত্র হইতে পারিত সেটি আমেরিকান প্রজাতন্ত্র হওয়ার পূর্বে ! ইহা হইল শিয়া আলেমদের অমার্জনীয় ব্যর্থতা । শিয়া আলেমদের চাইতে নিকৃষ্ট হইলাম আমরা সুন্নী আলেমগণ । কারণ দেরিতে হইলেও ইরান স্বর্নের বিনিময়ে তেল বিক্রি করিতেছে । কিন্তু সৌদী আরব কখনও সোনার বিনিময়ে তেল বিক্রি করিবে না । যতক্ষন না আংকেল শ্যাম বলিবে যে, সৌদী তোমাকে অনুমতি দিলাম । যায়নবাদী কাতার কখনও তাহা করিবে না । যায়োনিষ্ট সৌদী রাজতন্ত্র কখনও তাহা করিবে না । যায়োনিষ্টদের অনুমতি ছাড়া তাহাদের পুতুল কোন মুসলিম দেশই তাহা করিবে না । কাজেই আজ রাতে আমরা ইরানের জন্য হাত উঠাইয়া দোয়া করি, তাহারা যাবতীয় হুমকিকে অবজ্ঞা করিয়া সোনার বিনিময়ে তেল বিক্রি করিতেছে । যাহা সাদ্দাম হোসেন করিতে চাহিয়াছিল, ফলে তাহারা সাদ্দাম হোসেনকে উৎখাত করিয়াছে । যাহা মোয়াম্মার গাদ্দাফী করিতে চাহিয়াছিল, ফলে তাহারা গাদ্দাফীর পতন ঘটাইয়াছে । কিন্তু আপনারা যদি ইরানে হামলা করেন, ইহা ভিন্ন ব্যাপার । কেননা সেক্ষেত্রে আপনারা বিশ্বযুদ্ধের উসকানী দিলেন । আপনারা ইরান আক্রমণ করিতে পারেন না, কারণ সেক্ষেত্রে আপনি পারমাণবিক যুদ্ধের উসকানী দিলেন যাহা আমেরিকা এবং ইউরোপকে ধ্বংস করিবে । সেই কারণেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চায় না ইরানে আক্রমণ করিতে । এই মামুলি বিষয়টি বুঝিতে আপনাকে পিএইচডি করিতে হইবে না । কাজেই শিয়া আলেমদের নিয়া আমরা গর্বিত নই যেহেতু ইসলামে মুদ্রা হিসাবে সোনার গুরুত্ব বুঝিতে তাহাদের অনেকগুলো বছর লাগিয়া গিয়াছে । আমি কুটনৈতিকের চাকুরি অব্যাহত রাখিতে চাহিলাম না, সুতরাং আমার চুক্তির মেয়াদ শেষ হইলে ১৯৮৫ সালে আমি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চাকুরিতে ইস্তফা দিয়ে পাকিস্তানে যাই এবং তাহারা আলিমিয়া ইনিষ্টিটিউটের প্রিন্সিপাল হিসাবে আমাকে নিয়োগ করেন এক সময় আমি যেই ইনিস্টিটিউটের ছাত্র ছিলাম । ১৯৮৬ সালে অর্থাৎ আজ হইতে ২৫ বছর পূর্বে আমি প্রস্তাব করি যে, অত্র ইনিষ্টিটিউটের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন দিনার (স্বর্নমুদ্রা) এবং দিরহামে (রৌপ্যমুদ্রা) দেওয়া হউক । ফলে বোর্ডের সদস্যগণ আমার দিকে এমনভাবে তাকালেন যেন আমি মঙ্গল গ্রহ বা ভেনাস অথবা চাঁদের দেশ থেকে আসিয়াছি । কাজেই আমাদের স্কলারদের জ্ঞানগম্যির খবর আপনাদের জানা থাকা উচিত । এখন আবার ফিরিয়া যাই আমাদের আগের আলোচনায় । সাইয়্যেুল মোরসালীন (সাঃ) বলিয়াছেন, হাদীসটি বোখারী শরীফে আছে একবার আর এটি মুসলিম শরীফে পেয়েছি চারবার, প্রতিটি বর্ণনাই হযরত আবু হোরায়রার (রাঃ) । সুতরাং মোত্তাফাকুন আলাই, কাজেই কেউ আমাকে বলিতে পারিবেন না যে এটি জঈফ দুর্বল হাদীস । নবী করীম (সাঃ) বলিয়াছেন যে, “ফোরাত নদী তাহার সোনার পাহাড় বাহির করিয়া দিবে । লোকেরা তাহার দখল নিয়া ‍যুদ্ধে লিপ্ত হইবে । তাহাতে শতকরা ৯৯ জন নিহত হইবে । প্রতেক্যেই বলিবে হয়ত আমি বাঁচিয়া যাইব (এবং সোনার পাহাড়ের মালিক হইবে) । ঈমানদারগণের কেউ যেন অবশ্যই তাহা স্পর্শ না করে ” । কাজেই এই ঘটনায় যত লোক জড়িত থাকিবে, তাহাদের কেউ জানে না কে বাঁচিয়া থাকিবে এবং কে নিহত হইবে । সুতরাং বিষয়টি পুরোপুরি অনুমান নির্ভর খেলা । আমরা জানি আসলে সকলেই নির্মূল হইয়া যাইবে । গতানুগতিক যুদ্ধে কখনও শতকরা ৯৯ জন নিহত হয় না । সুতরাং আমরা ধারনা করিতে পারি যে, ইহা গতানুগতিক যুদ্ধ হইবে না । বরং ইহা হইবে পারমাণবিক যুদ্ধ বা ইহাতে তাহার চাইতেও ব্যাপক গণবিধ্বংসী মারণাস্ত্র ব্যবহৃত হইবে । ইহা আসিতেছে কেননা পৃথিবীর এই অঞ্চলে এমন কোন যুদ্ধ কখনও সংঘটিত হয় নাই যাহাতে যুদ্ধরত দলগুলোর শতকরা ৯৯ জন নিহত হইয়াছে । রাসুলে পাক (সাঃ) মুসলমানদের সম্পর্কে বলিয়াছেন, তাহারা অবশ্যই সেই সোনা স্পর্শ করিবে না । কাজেই আজ রাতে আমরা জিজ্ঞাসা করিতে চাই, এই সোনা কি ধাতব সোনা পূর্বেকার আলোচ্য রুটির পাহাড়ের মতো ? আমরা বলিয়াছি, ইহা ধাতব সোনা নয় যাহা নদীর নীচ থেকে বাহির হইয়া পাহাড়ের মতো স্তুপাকারে সজ্জিত হইবে । আমরা মনে করি ইহা রূপকভাষা, ধর্মীয় রূপক বর্ণনা । কিন্তু যদি আপনারা মনে করেন যে, ইহা হইবে সত্যিকারের ধাতব সোনা, তবে আপনারা সেই ধাতব সোনার জন্য অপেক্ষা করিতে থাকেন । আমরা সম্মুখে অগ্রসর হইতেছি । আমি সালাফী স্কলারদের নিকট এই মেসেজ পাঠাইতেছি, অবশ্যই অসম্মানের সাথে নয়, আমার হাতেও বক্সিং গ্লাভস নাই । আমরা বলিতে চাই যে, আপনাদের সাথে আমাদের পার্থক্য হইল দৃষ্টিভঙ্গিগত পদ্ধতিগত ।
আমরা মনে করি ইহা ধর্মীয় রূপক বর্ণনা, ‍উপমা বা দৃষ্টান্তমূলক । তবে সবকিছু রূপক বা উপমামূলক বর্ণনা নয় । যেমন- নবী করীম (সাঃ) যখন বলেন যে, ঈসা ইবনে মারিয়াম (আঃ) আসমান হইতে নামিয়া আসিবেন, তিনি বিবাহ করিবেন এবং তাঁহার সন্তান-সন্ততি জন্ম নিবে, এগুলি কি রূপক বর্ণনা ? না, এগুলো উপমা নয় বরং এগুলো হইল বাস্তব ঘটনা । তবে আমি আশা করি, তিনি কোন ফিলিস্তিনী মেয়েকেই বিবাহ করিবেন ইনশায়াল্লাহ । বিশ্বনবী (সাঃ) আরো বলিয়াছেন, তিনি অর্থাৎ হযরত ঈসা (আঃ) মৃত্যুবরণ করিবেন, তোমরা তাঁহার জানাযার নামাজ পড়িবে এবং তাঁহাকে আমার পাশেই দাফন করা হইবে । ভ্যাটিকান যাহা ইচ্ছা বলিতে পারে, পোপের যাহা ইচ্ছা বলিতে পারেন । জেসাস অর্থাৎ ঈশা (আঃ) যখন ফিরিয়া আসিবেন, তাঁহার মৃত্যুর পরে তাঁহাকে বিশ্বনবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ)-এর পাশেই সমাধিস্থ করা হইবে । তাহাদের পছন্দ হউক বা না হউক । ইহাই হইল তিনি যে আল্লাহর সত্য নবী তাহার আরেকটি প্রমাণ । কাজেই এখনও কি তাহাদের সময় হয় নাই যে, তাহারা স্বীকার করিবে আল্লাহ ছাড়া কোন প্রভূ নাই এবং মোহাম্মদ (সাঃ) তাঁহার নবী ও রাসুল । কাজেই সবকিছু রূপক নয় বরং কিছু বিষয় রূপক এবং কিছু বিষয় বাস্তব । এই বিষয়টি বুঝিতে হইলে আপনার আধ্যাত্মিক অনুপ্রেরনা থাকিতে হইবে । সুতরাং আমরা মনে করি পাহাড় মানে বিপুল বিশাল পরিমাণে কোন কিছু । কিন্তু তাহা কি সোনা বা ধাতব কিছু হইবে ? নাহ, আমরা মনে করি সেই এলাকা হইতে বিপুল পরিমাণে এমন কিছু বাহির হইবে যাহা সোনার ভূমিকা পালন করিবে । আমরা বিশ্বাস করি সেই জিনিসটি হইল তেল । ইহা হইল আমাদের মতামত । কিন্তু আমাদের মতামত আপনাকে বিশ্বাস করিতে হইবে না ‍যতক্ষন না আপনি উপলব্ধি করিতে পারেন যে ইহা সঠিক। ইহার বেশী আমি আর কি করিতে পারি ? কিন্তু আমার কি এই মতামত পোষন করিবার অধিকার আছে ? তাহারা আমাকে বিরত রাখিবার চেষ্টা করিয়াছে কিন্তু পারে নাই । সারা দুনিয়ার যত মানুষ ইহা শুনিয়াছে তাহারা ইহা গ্রহন করিতেছে । তেল যখন মুদ্রা হিসাবে ব্যবহৃত হওয়া শুরু করিয়াছে, পৃথিবী একটি নতুন জিনিস দেখিয়াছে যাহাকে বলে পেট্টোডলার । কিন্তু চল্লিশ বছর আমি তাহা বুঝিতে পারি নাই, আজ রাতে আমাকে তাহা স্বীকার করিতে হইবে । তাহারা যখন ব্রিটনওডে মিটিংয়ে বসিলেন ১৯৪৪ সালে সেখানে তাহারা আন্তর্জাতিক মুদ্রানীতি তৈরী করে । তাহারা যাহা করিয়াছে তাহা হইল সোনাকে মুদ্রা হিসাবে ব্যবহার নিষিদ্ধ ঘোষনা করা । তাহারা দিনার এবং দিরহামকে অর্থাৎ স্বর্নমুদ্রা এবং রৌপ্যমুদ্রাকে আমাদের ভাষায় হারাম ঘোষনা করে, ইহাই করিয়াছিল যাযনবাদীরা । কিন্তু দিনার এবং দিরহামকে আল্লাহ তায়ালা হালাল ঘোষনা করেন । দিনারের কথা কোরআনে আছে দিরহামের কথা কোরানে আছে । আপনি যদি কিছুকে হারাম করেন আল্লাহ যাহাকে হালাল করিয়াছেন ইহা কি কোন পাপ ? আপনি যদি কিছুকে হালাল করেন আল্লাহ যাহাকে হারাম করিয়াছেন ইহা কি কোন পাপ ? মাথা নাড়িতেছেন কেন ? মুখে বলেন । তাহারা আপনাকে গ্রেফতার করিতে পারিবে না । হ্যাঁ, ইহা একটি পাপ । পবিত্র কোরআনের কোন সুরাতে ইহা আছে ? হ্যাঁ, সুরা তাওবাহতে । “তাহারা তাহাদের পাদরী এবং রাবাঈদেরকে তাহাদের উপাস্য হিসাবে গ্রহন করিয়াছে । তাহারা ঈসা ইবনে মারিয়াম (আঃ)-কেও তাহাদের প্রভূ হিসাবে গ্রহন করিয়াছে । অথচ তাহাদেরকে ইহা ছাড়া অন্য কোন নির্দেশ দেওয়া হয় নাই যে, তাহারা কেবল এক আল্লাহর উপাসনা করিবে যিনি প্রসংশিত এবং যাহার কোন শরীক নাই”। এই আয়াত নাজিল হওয়ার পরে একজন সাহাবী আসিয়া বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল ! ইহুদী খ্রীষ্টানরা তো তাহাদের পাদরী এবং রাবাঈদের ইবাদত করে না । সুতরাং আল্লাহ কিভাবে ইহা বলিলেন ? ইহা ছিল তাহার প্রশ্ন । সুতরাং রাসুলে পাক (সাঃ) উত্তরে বলিলেন, “পাদরী এবং রাবাঈরা কি তাহা হালাল করে নাই আল্লাহ যাহাকে হারাম করিয়াছেন ? সুতরাং ইহাই হইল তাহাদের শিরক । ইহুদী এবং খ্রীষ্টানরা কি তাহা মানিয়া নেয় নাই ? সুতরাং ইহা হইল তাহাদের শিরক” । কাজেই আল্লাহ যাহাকে হালাল করিয়াছেন আপনি যদি তাহাকে হারাম করেন তবে ইহা শিরক । আর আল্লাহ তায়ালা যাহাকে হারাম করিয়াছেন আপনি যদি তাহাকে হালাল করেন তবে ইহাও শিরক ।

সুতরাং ১৯৪৪ সালে তাহারা যাহা করিয়াছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা নীতির মূল ভিত্তি তৈরী করিয়াছে তাহা পুরোপুরি শিরকের উপর প্রতিষ্টিত । কিন্তু আজ পর্যন্ত আমাদের মুফতী সাহেবগন তাহা উপলব্ধি করিতে পারেন না । আমি জানি না আমাকে আর কত কি করিতে হইবে । আমি এই ব্যাপারে বক্তৃতা দিতেছি তখন থেকে যখন আপনাদের অনেকের জন্মও হয় নাই । আজ পর্যন্ত মুফতিগণ তাহা স্বীকার করেন না এবং দাঁড়াইয়া বলেন না যে, ইহা শিরক । কেন ? একদিন তাহাদেরকে অবশ্যই এজন্য আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করিতে হইবে । ব্রিটনওডে তাহারা যাহা করিয়াছে তাহা হইল আইন করিয়া দিনার এবং দিরহামের পরিবর্তে কাগজের মুদ্রা প্রচলন করা । এখন থেকে স্বর্নমুদ্রা এবং রৌপ্যমুদ্রা নিষিদ্ধ, কেবল কাগজের মুদ্রা বৈধ । কিন্তু মাত্র একটি কাগজের মুদ্রা অর্থাৎ মার্কিন ডলার সোনার সাথে বিনিময় যোগ্য । আপনি ডলার নিয়ে আংকেল শ্যাম অর্থাৎ মার্কিন সরকারের কাছে আবেদন করিতে পারিবেন সোনার জন্য । তাহার মাত্রা হইবে পয়ত্রিশ ডলারের বিনিময়ে এক আউন্স সোনা । কিন্তু অন্য কোন কাগজের মুদ্রা নয়, কেবল মার্কিন ডলার । তাহলে অন্য মুদ্রাগুলির কি হইবে ? পাকিস্তানী রূপি, সৌদী রিয়াল, মালয়েশিয়ান রিংগিট, ইন্দোনেশিয়ান রুপিয়া, টার্কিশ লিরা, বলিভিয়ান বুলিভা, বাংলাদেশী টাকা । এসব কাগজের মুদ্রার কোনটিই সোনার সাথে বিনিময়যোগ্য নয় । বরং তাহাদের বিনিময় মান নির্ধারিত হইয়া থাকে মহামান্য ডলারের সাথে তাহাদের বিনিময় মূল্য হিসাবে । কাজেই আপনি পৃথিবীর সবচাইতে বড় যায়োনিষ্ট দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হাতে তুলিয়া দিলেন পৃথিবীর সবচেয়ে মহামূল্যবান অস্ত্র যাহা দিয়া সে মানবজাতির উপর তাহার শাসনকে প্রতিষ্টিত করিতে পারে । আমরা কতো বোকা ছিলাম ! আমরা কতোই না নির্বোধ ছিলাম ! প্রথমত আমাদের যাহাদের অন্য কোন কাগজের মুদ্রা আছে তাহা সোনার সাথে বিনিময় করিতে পারিব না, কেবলমাত্র ডলার । দ্বিতীয়ত, কেবলমাত্র সরকার যাইতে পারিবে ডলারের বিনিময়ে সোনা আনিতে, কোন ব্যক্তি তাহা করিতে পারিবে না । কাজেই এই সিস্টেমটি ৯৯.৯৯% হারাম, শিরকের কথা না হয় বাদ দিলাম, মাত্র ১% হালাল । এই সিস্টেমটি বাস্তবিক অর্থে কার্যকর ছিল ১৯৪৫ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত । ইহা এতো দীর্ঘদিন কার্যকর থাকিবার কারণ হইল আংকেল শ্যামের কাছে কেহই ডলারের বিনিময়ে সোনা আনিতে যায় নাই । এই সময় মার্কিন সরকার তাহাদের কাছে যত সোনা আছে তাহার চাইতেও বেশী ডলার ছাপিতে থাকে । ইহা অনেকটা এমন যেন আপনার কাছে আছে দশ হাজার টাকা কিন্তু আপনি চেক লিখে দিলেন এক লক্ষ টাকার । আপনি এই কাজ করিলে তো আপনার জেল হইয়া যাইত। অথচ এই কাজই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরকার করিতেছিল । বিশেষত ভিয়েতনাম যুদ্ধের ব্যয় নির্বাহের জন্য তাহারা দেদারছে ডলার ছাপিয়াছে । ১৯৭১ সালে ফ্রান্স সরকার চার্লস দ্য গলের দ্বারা উৎসাহিত হইয়া এই সিস্টেমের বিরুদ্ধে রুখিয়া দাঁড়ান । মাত্র দুইজন ব্যক্তি এই সিস্টেমের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সোচ্চার হন, তাহার একজন হইলেন চার্লস দ্য গল এবং আরেকজন হইলেন ডঃ মাহাথির মোহাম্মদ । সুতরাং চার্লস দ্য গল বলিলেন ইহা সুস্পষ্ট অবিচার, ইহার মাধ্যমে মার্কিন ডলার এবং মার্কিন সরকারকে অনৈতিকভাবে অন্য সকল দেশের চাইতে বেশী সুবিধা দেওয়া হইয়াছে । চার্লস দ্য গল এই নীতি প্রত্যাখ্যান করেন । আমার ভুল হইলে দয়া করিয়া ক্ষমা করিবেন ১৯৭১ সালে আমার মনে হয় ফ্রান্স সরকার অনেক ডলার নিয়া সোনার জন্য আংকেল শ্যামের নিকট আসে, তিন বিলিয়ন ডলার । আংকেল শ্যাম জানিতেন খেলা খতম । কেননা ইহা ছিল একটি খেলার মতো । আগামীকাল আমার একটি লেকচার আছে । পৃথিবীর আর্থ-রাজনৈতিক অবস্থা কেমন হইবে যদি ভবিষ্যতে আমরা প্যাক্স এমেরিকানার পরিবর্তে প্যাক্স ইসলামিকা প্রতিষ্টা করিতে পারি অর্থাৎ আন্তর্জাতিক মুদ্রানীতি এবং বানিজ্যনীতিতে ইসলামী আইন প্রচলন করিতে পারি ।
আগামীকাল রাতে আপনাদের কোরআন কথা বলিবে । আগামীকাল রাতে আপনাদের নবী (সাঃ) কথা বলিবেন । আপনাদের নিকট ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করিবেন আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা সম্পর্কে আমাদের অর্থাৎ ইসলামের ধারনা কেমন । আমরা যখন প্রতিশ্রুতি দেই, তাহা রক্ষা করি, ইহাই ইসলাম । কিন্তু আমেরিকার বিষয়টি এমন নয় । সুতরাং ফ্রান্স যখন তাহার সকল ডলারের বিনিময়ে সোনা চাহিল, আমেরিকা বলিল, আমরা প্রতিশ্রুতি দিয়াছিলাম কিন্তু প্রতিশ্রুতি রক্ষা করিতে আমরা বাধ্য নই । ধিক্কার জানাই তোমাদের ! মিয়া আধুনিক পাশ্চাত্য সভ্যতা ! তুমি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে এই অধিকার দিয়াছ । তুমি তাহাকে পরাশক্তি বানিয়েছ অথচ তাহার এই অনৈতিক কাজ ? এই ধরনের লোকেরা কি পৃথিবী শাসন করিবার উপযুক্ত ? সুতরাং তাহারা ৩৫ ডলারের বিনিময়ে এক আউন্স সোনার আন্তর্জাতিক আইনকে মানিতে অস্বীকার করিল অর্থাৎ কাগজের মুদ্রাকে স্বর্ন দ্বারা সমর্থনের প্রক্রিয়াকে পরিত্যাগ করিল । আন্তর্জাতিক মুদ্রা অর্থনীতি অধ্যয়নের পরেও আমি যাহা বুঝিতে পারি নাই এবং আল্লাহকে ধন্যবাদ যে এখন যাহা আমি বুঝিতে পারিতেছি, ব্রিটনওডে তাহারা যে মুদ্রানীতি প্রতিষ্টা করিয়াছিল তাহার উদ্দেশ্য এই ছিল না যে তাহা চিরকাল একই রকম থাকিবে । বরং তাহাদের উদ্দেশ্য ছিল সোনার পাহাড় অর্থাৎ তাহারা চাহিয়াছে তেল মুদ্রা হিসাবে অর্থাৎ পেট্টো ডলার হিসাবে কাজ করিবে । আমিও বিষয়টি বুঝিতে পারি নাই যে আন্তর্জাতিক মুদ্রা অর্থনীতির সাথে এই হাদিসের যোগসূত্র, আমার জানা মতে অন্য কোন আলেমও বিষয়টি বুঝিতে পারিয়াছেন বলিয়া আমার জানা নাই । ১৯৭১ সালে তাহারা ব্রিটনওডের চুক্তি পরিত্যাগ করে অর্থাৎ ছিড়িয়া ফেলে । কাজেই তখন থেকে ডলার আর সোনার দ্বারা সমর্থিত নয় । কাজেই বর্তমানে হাদিসের উক্তি পুরোপুরি বাস্তবায়নের প্রেক্ষাপট তৈরী হইয়া গেলো । ইহা ছিল একটি গোপন চুক্তি । সুতরাং ১৯৭৩ সালে আরব-ইসরাঈল যুদ্ধের পরে সম্পাদিত হয় । কাজেই এখন ইহাকে যুদ্ধের চাইতেও বেশী কিছু বলিতে হইবে । বাদশা ফয়সাল (রহঃ) আমেরিকার ওপর তেল অবরোধ আরোপ করেন । মনে হয় এই কাজ করিবার জন্য কেউ তাঁহার কানে কানে ফিসফিস করিয়া মন্ত্রণা দিয়াছিল, কারণ তাহারা ইহা চাহিয়াছিল । কেননা আমি বাদশা ফয়সালের আন্তরিকার ব্যাপারে নিঃসন্দেহ । কাজেই যুদ্ধের পরে যখন তেল উৎপাদনকারী আরব দেশগুলি আমেরিকার উপর তেল অবরোধ আরোপ করে, তখন আপনাদের অনেকের জন্ম হয় নাই, তখন সোনার দামের ব্যাপারে অদ্ভূত ঘটনা ঘটিতে লাগিল । আমি কেবল লক্ষ্য করিতেছিলাম ডলারের দামের প্রতি এবং ইহাই ছিল আমার ভুল । আমি ডলারের দিকে তাকাইয়াছিলাম এবং দেখিলাম এক সপ্তাহে ডলারের মূল্য ৪০০ গুণ কমিয়া গেল । আমার বিশ্লেষণ সঠিক ছিল কিন্তু ইহা মূল বিষয় ছিল না । তেল অবরোধ আরোপের পরে তেলের দাম বেরেল প্রতি ৬-৭-৮ ডলার থেকে বৃদ্ধি পাইয়া ১৬০ ডলারে ‍গিয়া দাড়াইল । ইহাতে তেল উৎপাদনকারী আরব দেশগুলির চক্ষু খুলিয়া গেল, আরে বাবা এতো দেখছি মেলা ডলার ! কাজেই ১৯৭৪ সালের আরব-ইসরাঈল যুদ্ধ, তারপর তেল অবরোধ এবং অস্বাভাবিক হারে তেলের মূল্যবৃদ্ধি । সোনার মূল্যও বৃদ্ধি পাইয়াছিল অস্বাভাবিক হারে সঠিক তথ্য আমার মনে নাই । তখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রী ছিলেন হেনরি কিসিঞ্জার নামক একজন খুবই কৌশলী ও চতুর ব্যক্তি এবং প্রেসিডেন্ট ছিলেন রিচার্ড নিক্সন । হেনরী কিসিঞ্জার সৌদী আরবে যান এবং বাদশা ফয়সালকে রাজী করাইতে সক্ষম হন । বাদশা ফয়সাল দেখিলেন এখন আয়রোজগারের সুযোগ কাজে লাগাইতে হইবে । ইহা ছিল একটি গোপন ‍চুক্তি বিশেষ । কিসিঞ্জার বাদশা ফলসালকে রাজী করাইতে সমর্থ হন যে, তিনি ডলার ছাড়া অন্য কোন মুদ্রায় তেল বিক্রি করিবেন না । ফলে ওপেক অর্থাৎ তেল ‍উৎপাদনকারী দেশগুলিও সৌদী আরবের অনুসরন করিবে । কেননা তাহারা সর্বদা সৌদী আরবের দিকে তাকাইয়া থাকিত । সুতরাং তেল ‍উৎপাদনকারী দেশগুলি খুব দ্রুত একটি আইন করিল যে, তাহারা কেবলমাত্র পেট্টোডলারের বিনিময়ে তেল বিক্রি করিবে । ইহাই ছিল তাহার সৃষ্টি রহস্য যাহাকে আমরা পেট্টোডলার বলি এবং ইহাই ছিল যাহা তাহারা ব্রিটনওড মুদ্রানীতি তৈরীর মাধ্যমে করিতে চাহিয়াছিল কিন্তু ইমরান হোসেন ইহা বুঝিতে পারে নাই । এখন তাহারা তৈরী করিয়াছে একটি চক্র, একচেটিয়া বাজার নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্টি, তাহারাই মূল্য নির্ধারন করে, তাহাদের কোন প্রতিদ্বন্দ্বী নাই । ইহা হারাম, এমনকি আমেরিকান আইনেও ইহা হারাম ।

এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ (সাঃ)-এর নিকট আসিয়া বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল ! বাজারে জিনিসপত্রের দাম অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পাইয়াছে । দয়া করিয়া মূল্য নির্ধারন করিয়া দিন । নবী করিম (সাঃ) বলিলেন, নাহ । আমাদের বাজারে কোন মূল্য নিয়ন্ত্রনের ব্যাপার নাই । ইসলাম পৃথিবীকে দিয়াছে মুক্তবাজার নীতি, প্রতিযোগিতামূলক বাণিজ্য । লোকটি তিন বার আসিলেন এবং রাসুলে পাক (সাঃ) তাহাকে তিন বারই না করিয়া দিলেন । ইসলামে কোন নির্ধারিত মূল্য বলিয়া কিছু নাই । ইসলামে নির্ধারিত বেতন বলিয়া কিছু নাই । ইসলামে সর্বনিম্ন বেতন বলিয়াও কিছু নাই । আমি আশা করি মালয়েশিয়ান সরকার শুনিতেছে । ইসলামে এগুলো নাই । ইসলাম দিয়াছে মুক্ত বাজার অর্থনীতি প্রতিযোগিতামূলক অর্থনীতি । আপনি কখনও দোকানে মূল্য তালিকা টানাইতে পারিবেন না ; চাউলের কেজি এতো টাকা, আটার কেজি এতো টাকা, এইসব কাজ হারাম । চাউল, আটা ইত্যাদি সবকিছু বিক্রি হইবে বাজারে তাদের চাহিদা অনুযায়ী । আমি অবাক হয়ে ভাবি মুফতিরা কি এগুলো জানে না ? কাজেই ইসলামে একচেটিয়া ব্যবসা বলিয়া কিছু নাই । ইসলামে বাজার সিন্ডিকেট বলিয়া কিছু নাই । কাজেই আপনি একজন উৎপাদনকারী হিসাবে বাজার নিয়ন্ত্রণ করিতে পারেন না, মূল্য নির্ধারন করিয়া দিতে পারেন না, যাহা ওপেক বা তেল উৎপাদনকারী দেশগুলি করিতেছে । আমি শুনি নাই কোন সুফী অথবা সালাফী স্কলার আল্লাহর আইন এবং নবীজির (সাঃ) সুন্নাহ অমান্য করিবার কারণে ওপেকের বিরুদ্ধে ফতোয়া দিয়াছেন । কাজেই বর্তমানে আমরা পাইয়াছি অবৈধভাবে নিয়ন্ত্রিত মার্কেট । বর্তমানে তেলের মূল্য মুক্তবাজার বা প্রতিযোগিতামূলক বাজার পদ্ধতিতে নির্ধারিত হয় না । তেলের মূল্য বর্তমানে কৃত্রিমভাবে নিয়ন্ত্রিত হয় তেলের বাজার যাহারা নিয়ন্ত্রন করে তাহাদের দ্বারা । তেলের কথা বাদ দেন, তাহারা তেলের বেলায় যাহা করিয়াছে একই কাজ করিয়াছে চাল, ডাল, আটা, কফি, চিনি ইত্যাদি সবকিছুর ক্ষেত্রে । তাহারা বাজার নিয়ন্ত্রন করে এবং মূল্য স্থির করে । পৃথিবীতে এখন মুক্তবাজার এবং প্রতিযোগিতামূলক বাজার বলিয়া কিছু নাই । ইহা হইল চুরি-চামারির যায়োনিষ্ট মার্কেট । ইহুদী ধর্ম কি পৃথিবীবাসীকে এই জিনিস শিক্ষা দিয়াছে ? আদৌ নয় । আপনারা তো ইহুদী ধর্মকে বিকৃত করিতেছেন এবং আপনারা ইহুদী ধর্মকে ধ্বংস করিতেছেন । এখন আসেন এই বিষয়টির সবচেয়ে আশ্চর্যজনক অংশে । তখন থেকে তেলের দাম একটি সুনির্দিষ্ট দিকেই অগ্রসর হইতেছে । তেলের দাম ছিল বেরেল প্রতি ৬, ৭, ৮ ডলার । তারপর হইল ১২ ডলার, তারপর ১৫ ডলার, তারপর ২০ ডলার, তারপর ৩০ ডলার, তারপর ৪০ ডলার, তারপর ৫০ ডলার, তারপর ৬০ ডলার, তারপর ৭০ ডলার, তারপর ৮০ ডলার । বর্তমানে ১০০ ডলারের উপরে । ইমরান হোসেন সব সময় ভাবিতেছি ইহা হইল ডলারের পতন । কারণ আমার চিন্তাভাবনার মূল কেন্দ্র ছিল ডলার । আর ডলারের মূল্য যখন কমিয়া যায় সাথে সাথে পৃথিবীর সকল মুদ্রার মূল্যও হ্রাস পায় । আপনি যদি মনে করেন যে, আপনাদের মালয়েশিয়ান রিংগিটের মান পাঁচ বছর আগে যেমন ছিল এখনও তাহাই আছে, তবে আপনি স্বপ্নের জগতে বসবাস করিতেছেন । পকেটে একই সংখ্যক রিংগিট নিয়া পাঁচ বছর আগে আপনি এখনকার চাইতে বেশী ধনী ছিলেন । আপনার রিংগিটের দাম কমিতেছে এবং আপনি তাহা জানেনও না । সুতরাং আমি বিষয়টি এই দিকে চিন্তা না করিয়া অন্য দিক নিয়া চিন্তা করিতেছিলাম । ইহাই ছিল আমার ভুল । তেলের দাম কেবলই বাড়িতেছে বাড়িতেছে আর বাড়িতেছে । ইহা কোন দুর্ঘটনাক্রমে হয় নাই । ইহা ছিল তাহাদের পরিকল্পনারই একটি অংশ । এই কারণেই মহানবী (সাঃ) বলিয়াছেন, ঈমানদারগণ সেই সোনা অবশ্যই স্পর্শ করিবে না । যখন থেকে ডলারে তেল বিক্রি শুরু হইল, তখন থেকে তেলই মুদ্রা হিসাবে কাজ করা শুরু করিয়াছে । আগে যেখানে সোনা ডলারকে সমর্থন দিত, এখন তেলই ডলারকে সমর্থন যোগাইতেছে । সুতরাং আমেরিকান ডলারকে সুযোগ করিয়া দেওয়া হইয়াছে উড়তে উড়তে আকাশে পৌছাঁইয়া যাইতে । যদিও সোনার বিপরীতে ডলারের দাম কমিয়া যাইতেছে তথাপি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দিন দিন কেবল ধনী হইতেছে ।

তাহাদের এখন আর সোনার সমর্থন দরকার পড়ে না । আমেরিকার ধন-সম্পদ অর্জন করিতে এখন মাত্র তিনটি জিনিস প্রয়োজন – কাগজ, কালি আর ছাপাখানা এবং এভাবে তাহারা যত সম্পদ চায় বানাইতে পারে । আমি জানি না ইমরান হোসেনসহ সকল অজ্ঞ নির্বোধ ইসলামী চিন্তাবিদদের সাথে কেয়ামতের দিন আল্লাহ কি ব্যবহার করিবেন । ইসলামের পন্ডিতরা ব্যর্থ হইয়াছেন কি ঘটিতেছে এবং কিসের প্রতিরোধ করা দরকার তাহা নির্ধারন করিতে । সমকালীন পৃথিবীতে কত শোচনীয় কত ধ্বংসাত্মক ছিল ওলামাদের ব্যর্থতা ! সুতরাং ১৯৭৩ সাল থেকে মার্কিন ডলার এখন আগের চাইতে উড়িতে পারে খুব সহজেই যত ইচ্ছা এবং আমেরিকা হইয়া গেল আগের চাইতে শক্তিশালী । মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পাইয়া গেল মানবজাতিকে সংশোধনের অধিকতর ক্ষমতা এবং পৃথিবীকে শাসন করিবার তাহাদের এজেন্ডা বাস্তবায়নের পর্যাপ্ত শক্তি । কিন্তু ইহাই গল্পের শেষ নয় আরো আছে । আরবরা দেখিলো কাগজ আসিতেছে, মার্কিন ডলার । স্তুপের পর স্তুপ কাগজ আসিতেছে অর্থাৎ মার্কিন ডলার । তেলের দাম কেবল বাড়িতেছে বাড়িতেছে আর বাড়িতেছে । মার্কিন ডলার হইল আন্তর্জাতিক মুদ্রা । হেনরী কিসিঞ্জার ছিল ধুরন্ধর কিন্তু ফয়সাল তাহার চালাকি বুঝিতে পারেন নাই । যদি আপনি বাজার নিয়ন্ত্রণ করেন, উদাহরণস্বরূপ বলা যায় তেল, যাহা ইসলামে হারাম এবং তারপরে কৃত্রিমভাবে মূল্য বৃদ্ধি করিতে থাকেন, ভাবিলেন না ক্রেতাদের কথা, তাহাদের বেশী দামে ক্রয় করিবার সামর্থ আছে কিনা । বিশ্ববাজারে বলা যায় সবচাইতে বেশী বিক্রিত পন্য হইল তেল এবং তাহার মূল্যও বৃদ্ধি পাইয়াছে সবচাইতে বেশী অন্য যে-কোন পণ্যের চাইতে । অনুমান করুন মিশরের অবস্থা, পাকিস্তান, বাংলাদেশ কিংবা ইন্দোনেশিয়ার কথা । একদিকে সৌদী আরব এবং অন্যান্য আরব তেল উৎপাদনকারী দেশ এতো বেশী মার্কিন ডলার লাভ করিতেছে যাহা নিয়া তাহারা কি করিবে ভাবিয়া পায় না । অন্যদিকে মুসলিম বিশ্বের অন্য অংশ ক্রমেই দরিদ্র হইতে আরো দরিদ্র হইয়া যাইতেছে । যায়োনিষ্টরা বসিয়া বসিয়া হাসিতেছে আর আমাদের আলেম সম্প্রদায় হালুয়া-রুটি খাইয়া ঘুমাইতেছে । সুতরাং আমাদের নিজেদের লোকেরাই পেট্টো ডলার অর্থনৈতিক ব্যবস্থার মাধ্যমে যায়োনিষ্টদের সুবিধা করিয়া দিতেছে তাহাদের মুসলিম ভাইদের দারিদ্র এবং অর্থনৈতিক দাসত্বে বন্দ্বি করিবার মাধ্যমে । এই কারণেই নবী করিম (সাঃ) বলিয়াছেন, “ঈমানদারগণ অবশ্যই সেই সোনা স্পর্শ করিবে না” । আমরা যদি এই হাদীসটি চল্লিশ বছর আগে বুঝিতে পারিতাম, এখন যেভাবে বুঝিতে পারিতেছি, আমরা কি করিতাম ? পৃথিবীর সকল মুসলিমদের নিকট একটি মেসেজ পাঠাইতে পারিতাম । চলুন আমরা একটি কাগজ দিয়ে শুরু করি, মার্কিন ডলার স্পর্শ করিবেন না । মার্কিন ডলারে কিছু ক্রয় করিবেন না এবং মার্কিন ডলারে কিছু বিক্রি করিবেন না । কারণ আমরা বুঝিতে পারিয়াছি যে, অর্থনৈতিক জুলুম এবং অর্থনৈতিক দাসত্ব ব্যবস্থার সম্রাট হইল মার্কিন ডলার । কাজেই আমরা ডলারের মাধ্যমে শুরু করিব এবং পরে অন্যান্য সকল কাগজের মুদ্রার বিরুদ্ধে অগ্রসর হইব । আমরা কাগজের মুদ্রা ব্যবহার করিব না, আমরা ইহা স্পর্শ করিব না । আমরা আবার দিনার ও দিরহামের ব্যবহারে ফিরিয়া যাইব, তোমরা যাহা ইচ্ছা করিতে পারো, এই সরকার ঐ সরকার কিংবা সেই সরকার । আমরা সুন্নাহর দিকে ফিরিয়া যাইবে । মহানবী (সাঃ) বলিয়াছেন, “যে-কেহ আমার কোন সুন্নাহকে পুণরুজ্জীবিত করিবে, সে জান্নাতে আমার সঙ্গী হইবে”। আর দিনার এবং দিরহাম হইল নবীজির (সাঃ) সুন্নাহ যাহা বর্তমানে পরিত্যক্ত হইয়াছে । কাজেই দিনার এবং দিরহামের সুন্নাহকে আপনি তখনই পুণরুজ্জীবিত করিতে পারিবেন, যখন আপনি ভুয়া প্রতারণামূলক হারাম কাগজের মুদ্রার ব্যবহার পরিত্যাগ করিবেন । কাজেই অগণিত মানুষ বর্তমানে স্বর্নমুদ্রা এবং রৌপ্যমুদ্রা ব্যবহার করিতেছে । এমনকি চীনারাও দিনার এবং দিরহাম তৈরী করিতেছে এবং ব্যবহার করিতেছে । একমাত্র স্বর্নমুদ্রা এবং রৌপ্যমুদ্রা ব্যবহারের মাধ্যমেই আপনি আপনার সম্পদ রক্ষা করিতে পারেন । অন্যদিকে ভোগাস কাগজের মুদ্রা এখনও মানুষকে দাসত্বে আবদ্ধ করিতেছে । এগুলিতে কোন বরকত নাই । আমরা সুপারিশ করিয়াছি যে প্রত্যন্ত অঞ্চলে আমরা মুসলিম গ্রাম তৈরী করিব । আমাদের গ্রামে একটি বাজার থাকিবে যাহাতে আমরা কাগজের মুদ্রা ব্যবহার করিব না । তোমরা যাহা ইচ্ছা করিতে পারো । আমাদেরকে জেলে ঢুকাইবে ? এগিয়ে যাও এবং আমাদেরকে জেলে ঢুকাও । ধিক্কার জানাই তোমাদেরকে ! আমরা তোমাদের রিংগিট ব্যবহার করিব না, তোমরা যাহা ইচ্ছা করিতে পারো । আমরা নবীজির (সাঃ) সুন্নাহয় ফিরিয়া যাইব । তোমরা যদি দিনার এবং দিরহাম ব্যবহার করিতে না দাও, তবে আমরা চাল মুদ্রা হিসাবে ব্যবহার করিব, চিনি মুদ্রা হিসাবে ব্যবহার করিব । তোমরা কি চাল-চিনিও ব্যবহার করিতে দিবে না ? ধিক্কার জানাই তোমাদের ! ধিক্কার জানাই তোমাদের !! ইহা হইল সুন্নাহয় প্রত্যাবর্তনে আমাদের পরিকল্পনা ।
এজন্যই রাসুলে করীম (সাঃ) বলিয়াছেন, “সেই সোনা অবশ্যই স্পর্শ করিবে না”। মানে হইল পেট্টোডলার অর্থনীতি গ্রহন করিও না । যাহার মাধ্যমে মার্কিন ডলারের অকল্পনীয় উত্থান ঘটিবে এবং কাগজের মুদ্রা ব্যবস্থা প্রতিষ্টিত হইবে । আর কেবল সম্প্রতি যখন ভারত ঘোষণা করিয়াছে যে, আমরা সোনার বিনিময়ে ইরানের তেল ক্রয় করিব, তখনই দেখিতেছি পেট্টোডলার অর্থনীতির পতনের সূচনা হইয়াছে । কোন ইসলামী পন্ডিত নয়, বরং ইহা হইল ইন্ডিয়া, রাশিয়া এবং চীন (যাহারা সোনাকে মুদ্রা হিসাবে ব্যবহারের কথা বলিতেছে) । সালাফী আলেমগনও নয়, সূফী আলেমগণও নয়, নাহ । আমি জানি কেবল একজন সুফী শায়খের কথা, আরও থাকিতে পারেন কিন্তু আমার জানা নাই, তুরষ্কের নাজিম আল কুব্রিশী, যিনি অনেক বছর যাবত দিনার এবং দিরহামের কথা বলিতেছেন । তিনি তাহার মুরিদ ভক্তদেরকে অন্তত চল্লিশটি দিনার ঘরে সঞ্চিত রাখিবার হুকুম করিতেন । শায়খ নাজিম এই কাজটি বছরের পর বছর যাবত করিয়া আসিতেছেন । আজকে আমি জানিতে পারিলাম তিনি সুফী শব্দটি ব্যবহার করিতে সকলকে নিষেধ করিয়াছেন । তিনি সুফী, তাসাউফ ইত্যাদি শব্দ বিলুপ্ত করিতে চান । আল হামদুলিল্লাহ, আমাদের এসব পরিভাষার কোন দরকার নাই । আমাদের আছে “আল এহসান” যাহা বিশ্বনবীর (সাঃ) একটি সুন্নাহ । কিন্তু রাসুলুল্লাহ (সাঃ) কেন ঘোষণা করিয়াছেন যে, “সেই সোনা অবশ্যই স্পর্শ করিবে না” আমার মতে ইহার আরেকটি কারণ রহিয়াছে । চলুন আলোচনা সমাপ্তির পূর্বে আমরা সেটি আলোচনা করি । আমি বিশ্বাস করি ইহার দুইটি দিক রহিয়াছে- একটি পেট্টোডলার ভিত্তিক অর্থনীতি এবং আরেকটি তেলর উপর নির্ভরশীলতা । বিষয়টি এমন নয় যে, তেলের ব্যবহার হারাম, আপনি তেল ব্যবহার করিতে পারিবেন না । বিষয়টি হইল তেলের ওপর এমনভাবে নির্ভরশীল হওয়া যে তেলের অভাবে আপনার সমগ্র পরিবহণ ব্যবস্থা অচল হইয়া পড়িবে । তাহারা এমনভাবে রাস্তাঘাট তৈরী করিয়াছে যে তাহাতে ঘোড়া-গাধা-উটের চলাচল করা অসুবিধাজনক, যাহাদেরকে পরিবহনের কাজে ব্যবহারের কথা কোরআনে উল্লেখ আছে । কৃষিকাজ বর্তমানে সম্পূর্ণরূপে তেলের ওপর নির্ভরশীল, সার উৎপাদন, পানি সরবরাহ ইত্যাদি । ম্যানুফ্যাকচারিং ইন্ডাস্ট্রিগুলি বর্তমানে শক্তির জন্য পুরোপুরি তেলের ওপর নির্ভশীল । বিদ্যুৎ উৎপাদন তেলের ওপর নির্ভরশীল । কাজেই আপনার যদি শিল্পভিত্তিক অর্থনীতি হয় আর আপনি তেল সরবরাহ করিতে না পারেন, তাহলে দেশে দাঙ্গা-হাঙ্গামা লাগিয়া যাইবে । এজন্য নবীজি (সাঃ) বলিয়াছেন, “সেই সোনা স্পর্শ করিও না”। আপনি এখন দেখিতে পাইবেন, সম্ভবত এই বছরের শেষের দিকে, ইসরাঈল যখন ইরানে হামলা করিবে, কেন মহানবী (সাঃ) বলিয়াছেন, “সেই সোনা স্পর্শ করিবে না”। আপনি দেখিতে পাইবেন তেলের দাম রকেটের গতিতে উপরে উঠিতেছে এবং এতো উপরে উঠিবে যে দুনিয়াবাসীদের অনেকের পক্ষেই আর তেল কেনা সম্ভব হইবে না । একদিকে তেলের দাম উপরে উঠিবে আর আপনার টাকার (রুপি-ডলার-রিংগিটের) দাম রকেটের গতিতে নীচে নামিবে । কাজেই বাংলাদেশ তখন তেল ক্রয় করিতে পারিবে না, পাকিস্তান তেল কিনিতে পারিবে না । তাহলে কিভাবে দাঙ্গা হাঙ্গামা খুনখারাবি থেকে রক্ষা পাইবেন ? এই ব্যাপারে ফিডেল ক্যাস্ট্রো বেশ বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়াছেন । আমেরিকা যখন কিউবার উপর অবরোধ আরোপ করিল, ফিডেল ক্যাস্ট্রো কিউবার অর্থনীতিকে পরিবর্তন করিয়া ফেলিলেন । কাজেই তেলের অভাবে সেখানে রায়ট লাগে নাই । কিউবার অধিকাংশ মানুষ এখন সাইকেলের মাধ্যমে যাতায়াত করে । কিউবার ম্যানুফ্যাকচারিং ইন্ডাষ্ট্রিও তেলের ওপর নির্ভরশীল নয় । সুতরাং তেল না থাকিলেও এখন কিউবায় দাঙ্গাহাঙ্গামা লাগিবার কোন সম্ভাবনা নাই । কিন্তু কিউবা যাহা করিতে পারিয়াছে, পাকিস্তান তাহা করিতে পারে নাই । ক্যাস্ট্রো তো ইসলামের অনুসারী নয় ! সুতরাং যখন ইরানে হামলা করা হইবে, যখন পাকিস্তানে হামলা করা হইবে, তখন বুঝিতে পারিবেন হুজুরে পাক (সাঃ) কেন বলিয়াছেন, “সেই সোনা স্পর্শ করিবে না”। কারণ তেলের ওপর নির্ভরশীলতা হইবে ষোলআনা এবং সম্পূর্ণরূপে এবং আপনারা তেল ছাড়া চলিতে পারিবেন না আর তেলের কোন বিকল্পও থাকিবে না । আপনি সৌরশক্তির ব্যবহার করিতে চাহিলেও তাহা পারিবেন না । সৌরশক্তির ব্যবহারে সফলতা অর্জন করিয়া কেউ যাহাতে যায়োনিষ্টদের তেলের ওপর নির্ভরশীলতার ফাঁদ থেকে বাহির হইতে না পারে, সেই জন্য তাহারা বিশ্বব্যাংক, আইএমএফর সাহায্যে তাহা নিশ্চিত করিয়াছে । কাজেই একবার যখন ইরানে হামলা করা হইবে, তেলের দাম চলিয়া যাইবে পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাহিরে এবং টাকার (রূপি-রিংগিটের) দাম কমিয়া যাইবে অকল্পনীয়ভাবে, দাজ্জাল তখন বলিবে, তুমি যদি তেল চাও তবে আমার উপাসনা কর ; তাহলেই তেল পাইবে যত চাও । সে কি বুঝাইতে চাহিয়াছে, আমি বলিতেছি সে কি চায় । তোমাকে ইসরাঈলকে স্বীকৃতি দিতে হইবে, ইসরাঈলের সাথে কুটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করিতে হইবে, ঢাকা-ইসলামাবাদ-কুয়ালালামপুরে ইসরাঈলী দূতাবাস খুলিতে দিতে হইবে এবং ইজরাঈলের রাষ্ট্রদূতকে গ্রহন করিতে হইবে । সবাই তখন এসব শর্ত মানিয়া নিবে, তা ঠিক এবং ইতিমধ্যেই অনেকে তাহা মানিয়া নিয়াছে ।
এই ঘটনার জন্য আমাদেরকে বেশী দিন অপেক্ষা করিতে হইবে না । দাজ্জাল খুব চমৎকারভাবে তাহার উদ্দেশ্য পরিকল্পনা প্রতারনা ফিতনাহ কলাকৌশল প্রয়োগে সফলকাম হইবে । মহানবী (সাঃ) কি বলেন নাই যে, “দাজ্জাল সাথে রুটির পাহাড় থাকিবে”। ইহাই তো রুটির পাহাড়, যেই বিপুল বিশাল ধনভান্ডার সে জমা করিয়াছে । কাজেই তাহারা যাহাতে তেলের প্রতারনা অয়েল ব্ল্যাকমেইল করিতে পারে….অবশ্য শব্দটি ব্ল্যাকমেইল না হয়ে হোয়াইটমেইল হবে । যেহেতু শ্বেতাঙ্গ দুনিয়া ইহা করিতেছে । আপনি একমাত্র তখনই তেল পাইবেন যখন তাহাদের নিকট আত্মসমর্পন করিবেন । অনেকে ইতিমধ্যেই আত্মসমর্পন করিয়াছে, বর্তমান দুনিয়ার অনেকেই । আমরা এই হাদীসের একটি ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ আপনাকে প্রদান করিলাম । আমাদের বিশ্লেষণ যদি সঠিক হয়, তবে নবী (সাঃ) আপনাকে নির্দেশ দিতেছেন, “সেই সোনা স্পর্শ করিবে না”। আপনি জানেন যে, আপনাকে ধাতব সোনার পাহাড়ের জন্য অপেক্ষায় বসিয়া থাকিতে হইবে না । তিনি আপনাকে বলিতেছেন যে, পেট্টোডলার ভিত্তিক অর্থনীতি গ্রহন করিবে না । আর আপনি যদি বিশ্বনবীর (সাঃ) হুকুম অমান্য করেন, আপনাকে তাহার জন্য খেসারত দিতে হইবে । ইহার আরেকটি অর্থ হইতে পারে, তেলের ওপর অতিমাত্রায় নির্ভরশীল হইবে না । এখন আমরা কি করিতে পারি ? উত্তর হইল একটি মস্তিষ্ক যথেষ্ট নয় । হইতে পারে এই সেমিনারে যাহারা উপস্থিত আছেন অথবা ইউটিউবে এই লেকচার শুনিতেছেন, তাহাদের মধ্যে কেউ এই বিষয়টি নিয়া গবেষণায় আত্মনিয়োগ করিবেন । আমি যেই সমাধান দিয়াছি তাহার বাহিরেও কোন নতুন সমাধান খুঁজিয়া বাহির করিবেন । কেননা আমার হাতে সময় নাই । আন্তর্জাতিক অর্থ ব্যবস্থা, ফোরাত নদী এবং সোনার পাহাড় । এই বিষয়ের উপর পিএইচডি থিসিস করেন, নতুন গবেষণা নিয়া আসুন যাহাতে ইসলামী দুনিয়া উপকৃত হইতে পারে । তারপর আমরা কর্মকৌশল নির্ধারন করিব কিভাবে আমরা মহানবীর (সাঃ) হুকুম মানিয়া চলিবার জন্য কি কি করিতে পারি । আমিও একটি সমাধান দিয়াছি আর তাহা হইল দূরবর্তী প্রত্যন্ত অঞ্চলে গিয়া মুসলিম গ্রাম প্রতিষ্টা করা । এই হলরুমে উপস্থিত আমার অনেক ছাত্র ইতিমধ্যেই প্রত্যন্ত অঞ্চলে জমি ক্রয় করিয়া মুসলিম ভিলেজ প্রতিষ্টা করিয়াছে, তাহারা সেখানে রওয়ানা দিয়াছে, নিজেদের খাদ্য-শস্য নিজেরা উৎপাদন করিবে, ডেইরী ফার্ম প্রতিষ্টা করিবে । যাহাতে আমরা হারাম, প্রতারনামূলক এবং ভোগাস অর্থনৈতিক সিষ্টেম হইতে দূরে থাকিতে পারি । আমরা মহান আল্লাহ তায়ালার নিকট প্রার্থনা করি তিনি যেন আমাদেরকে পথ প্রদর্শন করেন যাহাতে আমরা বর্তমান দুনিয়ায় বসবাস করিয়াও নিজেদের ঈমানকে সুরক্ষা করিতে সক্ষম হই । আমিন !
মূল – আল্লামা ইমরান নজর হোসেন
অনুবাদ – বশীর মাহমুদ ইলিয়াস
A Mountain of Gold, India, Iran and Akhirul-Zaman লেকচারের অনুবাদ