Foetus Malposition (ঔষধে গভর্স্থ শিশুর পজিশান ঠিক) : পালসেটিলা (Pulsatilla pratensis) ঔষধটি যে গর্ভস্থ ভ্রুণের অবস্থানকে পরিবর্তন করতে পারে; বিষয়টি প্রথম লক্ষ্য করেন ফিলাডেলফিয়ার ডাঃ বেথমান। একবার এক প্রসব যন্ত্রণাকাতর রোগীর জন্য তাকে ডাকা হলে তিনি গিয়ে দেখলেন- প্রচণ্ড ব্যথা থাকলেও পর্দা তখনও ছিন্ন হয়নি এবং জরায়ু মুখ সামান্য খুলেছে। পরীক্ষা করে তিনি দেখলেন, শিশুর কাঁধ জরায়ু মুখের দিকে অবস্থান করছে (shoulder presentation)। প্রসবকার্যটি দ্রুত হওয়ার আশা নেই মনে করে তিনি রোগিনীকে একমাত্রা পালসেটিলা খাওয়ান। কয়েক মিনিট পর ভদ্রমহিলা পেটে ব্যথা অনুভব করলেন এবং তার মনে হলো পেটের মধ্যে কিছু একটা মোচড় দিয়ে ঘুরে গেলো যাতে তিনি ভীত হয়ে পড়লেন। কিছুক্ষন শান্ত থাকার পর প্রসব ব্যথা নিয়মিতভাবে পুণরায় শুরু হয় এবং দ্বিতীয়বার পরীক্ষায় ডাঃ বেথমান মহা বিস্ময়ের সাথে লক্ষ্য করেন যে, ভ্রুণের মাথা যথাযথ অবস্থানে (cephalic presentation) এসে গেছে এবং একটু পরে সম্পূর্ণ স্বাভাবিকভাবে প্রসবকারয্য সম্পন্ন হয়। তিনি বছর পাঁচেক পূর্বে ঠিক একই পরিস্থিতিতে একই পদক্ষেপ নিয়ে একই রকম ফল পেয়েছিলেন। বিষয়টি তিনি স্থানীয় হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল গেজেটে বিস্তারিত লিখে পাঠান।
মহিলাদের জীবনে সবচেয়ে বিপজ্জনক সময় হলো সন্তান প্রসব কাল এবং গভর্স্থ সন্তানের পজিশন যদি ঠিক না থাকে (অর্থাৎ মাথা যদি নীচের দিকে না থাকে), তবে তাদের বিপদের আর কোন সীমা থাকে না। এক্ষেত্রে গভবর্তী মাতা এবং তার পেটের শিশু দুজনেরই মৃত্যুর সম্ভাবনা বেড়ে যায়। বাচ্চার পজিশান ঠিক না থাকলে নরমাল ডেলিভারি হয় না এবং ডাক্তাররা জীবন বাচাঁতে অপারেশন করে ডেলিভারি করেন। কিন্তু অপারেশান করলে তার জন্য সারাজীবনই নানা রকম ভোগান্তি পোহাতে হয়। তাছাড়া অপারেশানের জায়গায় আবার হারনিয়া হয় এবং হারনিয়া সারাতে আবার কয়েকবার অপারেশান করতে হয়। অথচ পালসেটিলা খুব সহজেই ইত্যাকার হুজ্জত থেকে হবু মায়েদের রক্ষা করতে পারে। পালসেটিলার ব্রিচ, ভার্টেক্স, ট্রাঙ্ক, ফিট, ক্রশ, শোলডার প্রভৃতি অনাকাঙ্খিত অবস্থানকে (mal-presentation) পরিবর্তন করার ক্ষমতার ওপর সবচেয়ে বেশী গবেষণা করেছেন বোষ্টনের ডাঃ মার্সি বি. জ্যাকসন। তিনি এই সম্পর্কিত প্রায় তিন শতাধিক ক্লিনিক্যাল অবজারবেশন লিপিবদ্ধ করে গেছেন। এছাড়াও ডাঃ ডডি, ডাঃ উডওয়ার্ড, ডাঃ মার্টিন, ডাঃ ক্যানিয়ন, ডাঃ ক্যান্ট, ডাঃ বেইলি, ডাঃ বাটলার প্রভৃতি অনেকে তাদের অভিজ্ঞতার কথা লিখে গেছেন। তাদের বর্ণিত অধিকাংশ কেইসে পালসেটিলা ব্যবহৃত হয়েছে ৩০ শক্তিতে এবং প্রতি মাত্রা (৫-১০টি বড়ি) আধাঘণ্টা থেকে কয়েক ঘণ্টা পরপর হিসেবে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ৬ অথবা ২০০ শক্তি এবং পঞ্চাশ সহস্রতমিক শক্তিকরণ পদ্ধতিতেও ব্যবহৃত হয়েছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এক বা দুই মাত্রার পর ভ্রুণের পজিশন ঠিক হয়ে গেছে।
অন্যদিকে ভ্রুণের অবস্থান ঠিক হতে কয়েক মিনিট থেকে এক সপ্তাহর মতো লেগে গেছে। বিষয়টি নির্ভর করে প্রসবকালের নৈকট্যের উপর ভিত্তি করে। প্রসবকাল যত নিকটবর্তী; ভ্রুণের অবস্থান তত দ্রুত কারেক্ট হয়ে থাকে। তবে কাঙ্খিত প্রসবকাল কয়েক মাস দূরে থাকতেও পালসেটিলার সাহায্যে ভ্রুণের মেলপ্রেজেনটেশন ঠিক করা যায়; এতে গর্ভপাতের কোন আশঙ্কা নেই। যদিও মূলত অনিয়মিত বা অপরযাপ্ত প্রসব ব্যথাকে নিয়মিত এবং বেগবান করা এবং প্রসবকাযর্কে তাড়াতাড়ি সম্পন্ন করার জন্যই পালসেটিলা ঔষধটি ব্যবহৃত হয়। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, ভ্রুণের মেল-প্রেজেনটেশন ঠিক করার জন্যও রোগীর সামগ্রিক মনো-দৈহিক (constitutional symptoms) লক্ষণ সমষ্টির উপর ভিত্তি করে ঔষধ সিলেকশন করা উচিত এবং টোটাল সিম্পটমের ভিত্তিতে নিরবাচিত যে-কোন ঔষধের দ্বারাই ভ্রুণের এলোমেলো পজিশান ঠিক করা যায়; তথাপি এক্ষেত্রে পালসেটিলাকে বলা যায় একেবারে স্প্যাসিফিক।