মালহামা’র ভয়াবহতা এবং দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতিকর যন্ত্রণাদায়ক প্রভাব নিয়া আজকে কিছু আলোচনা করব । বিশ্বনবী (সাঃ) এই যুদ্ধের নাম দিয়েছেন মালহামা অর্থাৎ বড় যুদ্ধ বা বিশাল যুদ্ধ বা মহাযুদ্ধ । বাইবেল এবং তাওরাতে ইহার নাম দেওয়া হয়েছে আরমাগেডন, কারণ সিরিয়ার আরামগ নামক স্থান থেকে এটি শুরু হবে । যারা ধর্ম বিশ্বাস করেন না তাদের মতে ইহার নাম হলো তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ বা পারমাণবিক যুদ্ধ । মালহামা কেনো হবে এবং মালহামা কেনো খুব শীঘ্রই হওয়ার সম্ভাবনা আছে এই ব্যাপারে কোনো আলোচনা করতে চাই না । কারণ এই ব্যাপারে বিশেষজ্ঞদের অনেক বড় বড় গবেষণামূলক প্রবন্ধ আছে, যাদের দরকার পড়ে নিতে পারেন । ভয়ঙ্কর এই যুদ্ধের পরে মানবজাতির ৫ ভাগ অথবা ১০ ভাগ হয়ত বেঁচে যাবেন আর বাকীরা সবাই কবরে চলে যাবেন । কারণ ইহা হবে এটম বোমা হাইড্রোজেন বোমার যুদ্ধ, হাজার হাজার এটম বোমা হাইড্রোজেন বোমা তাতে নিক্ষেপ করা হবে । নুরনবী (সাঃ) বলেছেন, দুই দলের মধ্যে এই যুদ্ধ হবে এবং দুই দলের ৯৯ ভাগ লোক তাতে নিহত হবে । এই দুই দল হলো একদিকে এশিয়া মানে চীন রাশিয়া এবং অন্য দিকে থাকবে ইউরোপ-আমেরিকা । বাইবেলে বলা হয়েছে ভালো এবং মন্দের মধ্যে এই যুদ্ধ হবে । বাস্তবেই এশিয়া হলো ভালোর দলে আর ইউরোপ-আমেরিকা হলো খারাপের দল । ইউরোপ-আমেরিকা হলো ডাকাতের দল, স্বৈরাচারের দল ।
মূল যুদ্ধটা মানে বোমা বর্ষণ বিশ ত্রিশ মিনিটের মধ্যেই শেষ হয়ে যাবে যাতে দুইশ তিনশ কোটি মানুষের নগদ মৃত্যু হবে । বোমার নীচে পড়ে আগুনে জ্বলেপুড়ে বা বিল্ডিংয়ের নীচে চাপা পড়ে যেই মৃত্যুটা হবে তা হবে কিছুটা আরামদায়ক, কারণ অল্পসময়ের মধ্যে মৃত্যু হয়ে যাবে । অন্যদিকে যারা বোমার হাত থেকে বেঁচে যাবে তাদের মৃত্যুটা হবে ভীষণ যন্ত্রণাদায়ক কষ্টদায়ক নারকীয় মৃত্যু । আল্লাহ আমাদের সবাইকে হেফাজত করুন, আমিন । এমন করুণ মৃত্যু আমার শত্রুরও যেন না হয় । সারা দুনিয়ায় এটম বোমার হাইড্রোজেন বোমার তেজস্ক্রিয় ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়বে এবং থাকবে কয়েক মাস থেকে বছর পর্যন্ত । এই ধোঁয়াগুলো মেঘের সমান উচুতেঁ উঠবে (mashroom cloud) । ফলে যে-সব পাহাড় পর্বত মেঘের চাইতে উঁচু তাতে যারা বসবাস করবে তারাই কেবল সেই ধোঁয়ার হাত থেকে রক্ষা পাবে । এজন্য নবী করীম (সাঃ) বলেছেন, শেষ যুগের ঈমানদারগণ গরু-ছাগল নিয়ে পাহাড অথবা নদী এলাকায় চলে যাবে । এই ধোঁয়াতে নিঃশ্বাস নিয়ে মানুষ ক্যানসার নিউমোনিয়াসহ মারাত্মক মারাত্মক রোগে আক্রান্ত হবে । বোমা ছাড়াও তারা তৈরী করে রেখেছেন করোনাভাইরাসের চাইতেও আরো মারাত্মক জীবাণু যা শত্রুদের উপর নিক্ষেপ করবে । মানুষ একসাথে শরীরের পাঁচ দশ জায়গায় ক্যানসারে আক্রান্ত হবে । সুরা দোখান বা ধোঁয়া নামে কোরআনে একটি সুরাই আছে যাতে বলা হয়েছে একদিন সারা আসমান ধোঁয়ায় ঢেকে যাবে আর তা হবে মানুষের জন্য এক ভয়াবহ যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি ।
দেখুন কোরআনে এটম বোমা বিস্ফোরণের কথাকে কোনো গুরুত্বই দেওয়া হয়নি বরং গুরুত্ব দিয়ে বলা হয়েছে কেবল এটম বোমার ধোঁয়ার কথা । কারণ বোমা বিস্ফোরণের চাইতে বেশী মানুষ মরবে ধোঁয়ার কারণে এবং বোমা বিস্ফোরণের চাইতে মানুষ বেশী কষ্ট পাবে শাস্তি পাবে ধোঁয়ার কারণে । এই ধোঁয়ার কারণে সূর্য ঢেকে যাবে অনেক দিনের জন্য এবং পৃথিবীতে সূর্যের আলো পেৌঁছবে না কয়েক মাস । ফলে পৃথিবীর তাপমাত্রা নেমে যাবে হিমাঙ্কের নীচে (nuclear winter), সারা দুনিয়ায় বরফ পড়ে যাবে । পৃথিবীর জলবায়ু পাল্টে যাবে, বৃষ্টি কমতে কমতে বন্ধ হয়ে যাবে কয়েক বছরের জন্য । ফলে সূর্যের আলোর অভাবে এবং বৃষ্টির অভাবে গাছপালা এবং জমির ফসল নষ্ট হয়ে যাবে এবং কয়েক বছর ফসল উৎপাদন কমতে কমতে একেবারে বন্ধ হয়ে যাবে । এসবের পাশাপাশি চলতে থাকলে ধর্মীয় এবং অভাব-অনটনের কারণে খুনখারাবি মারামারি কাটাকাটি । এবার চিন্তা করুণ একজন মারাত্মক ক্যানসার রোগী একজন মারাত্মক অসুস্থ মানুষ ডাক্তার নাই ঔষধ নাই, সাথে আছে ক্ষুধার কষ্ট, পিপাসার কষ্ট, প্রচণ্ড শীতের কষ্ট, সাথে আবার শত্রুর অত্যাচার ।
মাসের পর মাস বছরের পর বছর এমন বিভৎস নারকীয় কষ্ট ভোগ করতে করতে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়বেন শত শত কোটি বনী আদম । রাশিয়া এমন বোমাও তৈরী করেছে যা সমুদ্রে নিক্ষেপ করলে একশ ফুট উঁচু ঢেউ এসে সবকিছু ভাসিয়ে নিয়ে যাবে । হাজার হাজার এটম বোমা হাইড্রোজেন বোমার আঘাতে ভূমিকম্প হবে অন্তত লক্ষ বার । এখনকার এটম বোমা এতো শক্তিশালী যে, ঢাকা-দিল্লী-লন্ডন-নিউ ইয়র্কের মতো বড় শহরকে ধ্বংস করতে একটা বোমাই যথেষ্ট । রাশিয়ার কাছে এমন মিসাইল আছে যার একটির ভিতরেই বারটি এটম বোমা থাকে, যার একটি মারলেই ফ্রান্স বা জার্মানীর মতো একটি বড় দেশ মানচিত্র থেকে মুছে যাবে । বিশেষজ্ঞদের মতে, মালহামার পরে বেশীর পক্ষে হয়ত বিশ পঞ্চাশ কোটি মানুষ বেঁচে থাকতে পারে, বাকী সাতশ আটশ কোটি সবাই কবরে চলে যাবেন । বিশেষজ্ঞদের মতে, মালহামা হবে এমন ভয়ঙ্কর যুদ্ধ যেমনটা মানবজাতি আগেও কখনো দেখেনি এবং পরেও কখনো দেখবে না । এটম বোমা আছে এমন দেশগুলো মালহামাতে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে যেমন – আমেরিকা, রাশিয়া, ব্রিটেন, ফ্রান্স, চীন, ভারত, পাকিস্তান ইত্যাদি এবং এদের কাছাকাছি অবস্থিত দেশগুলি । মোটামুটি আরব দেশগুলো এবং তাদের কাছাকাছি কিছু দেশ ছাড়া পৃথিবীর বাকী দেশগুলো এমনভাবে ধ্বংস হবে যে সেগুলোতে মানুষ বসবাসের উপযুক্ত থাকবে না । এসব দেশেগুলোতে যারা বেঁচে থাকবেন তারা জীবন বাঁচাতে মধ্যপ্রাচ্যের দিকে চলে যাবেন । অনেকে যুক্তি দেখান যে, পারমাণবিক যুদ্ধ যেহেতু অতীতে কখনো হয়নি, কাজেই সেই যুদ্ধে কেমন ক্ষয়ক্ষতি হবে সেটা নিশ্চিত করে বলা যায় না । যুক্তি ঠিক আছে তবে একশ ভাগ না হলেও নব্বই ভাগ নিশ্চিত করে বলা যায় । কারণ আমাদের সামনে আছে জাপানের হিরোশিমা এবং নাগাসাকীর মডেল । দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের এই দুটি শহরে এটম বোমা নিক্ষেপ করা হয়েছিল । জাপানে যেই ধরনের এটম বোমা নিক্ষেপ করা হয়েছিল এখনকার এটম বোমাগুলি তার চাইতে এক হাজার থেকে পঞ্চাশ হাজার গুণ বেশী শক্তিশালী । অন্যদিকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের ঘটনাটি ছিল স্থানীয় পর্যায়ের আর মালহামাতে সেটি হবে বিশ্বব্যাপী ।
এবার আসি মালহামার সময় বাংলাদেশের কি অবস্থা হবে তার আলোচনায় । বাংলাদেশে কি কোনো এটম বোমা হাইড্রোজেন বোমা নিক্ষেপ করা হবে ? উত্তর হলো ‘না’ । কারণ বাংলাদেশ পারমাণবিক অস্ত্রধারী আমেরিকা-রাশিয়া-চীন-ভারত-পাকিস্তান সবার সাথেই বন্ধুত্বপূর্ন সম্পর্ক বজায় রেখে চলে । কাজেই তাদের কারো এটম বোমার টার্গেটে বাংলাদেশ নাই । আমাদের মনে রাখতে হবে যে এটম বোমার অধিকারী দেশগুলো কেবল অন্য এটম বোমার অধিকারী দেশকেই সাধারণত টার্গেট করে থাকে । দ্বিতীয় কথা হলো অন্য দেশকে টার্গেট করে নিক্ষেপ করা এটম বোমা যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বা অন্য কোনো ভাবে বাংলাদেশে এসে পড়ার সম্ভাবনা আছে কিনা ? উত্তর হলো ‘না’ । কারণ এটম বোমা সাধারণত দুই পদ্ধতিতে নিক্ষেপ করা হয় (১) আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালেস্টিক ক্ষেপনাস্ত্রের মাধ্যমে (ICBM) এবং (২) জঙ্গী বিমানের মাধ্যমে । প্রথমত ক্ষেপনাস্ত্রগুলোতে কমপিউটার সেট করা থাকে যেগুলো তাকে নির্দিষ্ট স্থানে চালিয়ে নিয়ে যায় ।
এদেরকে চলার পথ দেখিয়ে নিয়ে যায় মহাশূণ্যে স্থাপিত সামরিক সেটেলাইট । সে-সব সেটেলাইট ধ্বংস না করে এসব মিসাইলকে ভুল পথে নিয়ে যাওয়া সম্ভব না । রাশিয়া বর্তমানে এমন মিসাইল তৈরী করেছে যেগুলো সেটেলাইটের সাহায্য ছাড়াই নির্দিষ্ট গন্তব্যে পেৌছাতে পারে । তাছাড়া এসব মিসাইল ঘণ্টায় হাজার হাজার মাইল গতিতে ছুটে যায়, কাজেই দূর থেকে কোনো টেকনোলজির মাধ্যমে সেগুলোকে ভূল পথে নিয়ে যাওয়ার কল্পনাই করা যায় না । দ্বিতীয়তঃ জঙ্গীবিমানের মাধ্যমে যে-সব এটম বোমা নিক্ষেপ করা হবে সেগুলো একজন পাইলট চালিয়ে নিয়ে যাবেন । পাইলটকে সরকার যেখানে বোমাবর্ষণের হুকুম দিবেন সে সেখানেই বোমাবর্ষন করবে । পাইলটকে ঘুষ দিয়ে বা অন্য কোনো উপায়ে এক জায়গার বদলে অন্য জায়গায় বোমাবর্ষণ করার আশা করা যায় না । কাজেই আমাদের মৃত্যু হবে এটম বোমার আগুনে নয় বরং এটম বোমার ধোঁয়ায় যা হবে অনেক বেশী কষ্টদায়ক যন্ত্রণাদায়ক বিভীষিকাময় । আল্লাহ আমাদের সবাইকে রক্ষা করুন, আমিন । – বশীর মাহমুদ ইলিয়াস